চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছেন। একই সময়ে গড়ে আহত হয়েছেন ৪৬ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
Advertisement
সোমবার বিকেলে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ১৮৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১২৩ জন নিহত ও ৫৫৫৮ জন আহত হয়েছেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের ৬টি বিভাগীয় হাসপাতালের তথ্য অনুসারে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৪ মাসে মারা গেছে ২০৬ জন। বিদায়ী বছরের একই সময়ে ছোট-বড় ১৭৬৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯৭৯ জন নিহত ও ৪৭২৭ জন আহত হয়েছিল । এতে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে মোট দুর্ঘটনা ১ দশমিক ৬ শতাংশ, নিহত ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, আহত ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জানুয়ারি মাসে ৪৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৫৩ জন আহত ও ৫১৪ জন নিহত হয়, এ মাসে ১৪০টি বাস, ২০৪টি ট্রাক-লরি ও কাভার্ডভ্যান, ৯টি হিউম্যান হলার, ৪১টি কার ও মাইক্রোবাস, ৫২টি অটোরিকশা, ৯৮টি মোটরসাইকেল, ৩২টি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫৩টি নছিমন-করিমন- ট্রাক্টর সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এসব দুর্ঘটনার ১৭৭টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮০টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে এবং ৮টি ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ৬ জন, গাড়ি চাপায় ২০৫ জন পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১৫২১ জন আহত ও ৪৫৯ জন নিহত হয়। এই মাসে ১১৩টি বাস, ১৮৯টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৯টি হিউম্যান হলার, ৬৩টি অটোরিকশা, ৩২টি কার ও মাইক্রোবাস, ৯৩টি মোটরসাইকেল, ২৩টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৩৫টি নছিমন করিমন সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এসব দুর্ঘটনার ১৫৪টি মুখোমুখি সংঘর্ষ ও ৮৭টি খাদে পড়ে, ৬টি ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ১৭০টি গাড়ি চাপার ঘটনা ঘটে।
Advertisement
মার্চ মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ মাসে ৪৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫০৬ জন আহত, ৪৮৩ জন নিহত হয়েছেন। এ মাসে ১৩২টি বাস ২৩৬টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৭টি হিউম্যান হলার ৬১টি অটোরিকশা, ২৭টি কার ও মাইক্রোবাস, ৯০টি মোটরসাইকেল, ১৪টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ২৬টি নছিমন করিমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এসব দুর্ঘটনার ১৫৬টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮৭টি খাদে পড়ে ও ৩টি ট্রেন- যানবাহনের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ২২২টি গাড়ি চাপার ঘটনা ঘটেছে।
এপ্রিল মাসে ৪৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৭৮ জন আহত ও ৪৬১ জন নিহত হয়। এই মাসে ১১৪টি বাস, ১৮৪টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৬টি হিউম্যান হলার, ৬১টি অটোরিকশা, ২৭টি কার ও মাইক্রোবাস, ৮২টি মোটরসাইকেল, ১৪টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৩৬টি নছিমন করিমন-ট্রাক্টর সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এসব ঘটনার ১১৮টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮৯টি খাদে পড়ে, ১টি বাস-ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ এবং ২১১টি গাড়ি চাপার ঘটনা ঘটে।
সড়ক দুর্ঘটনারোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতি কয়েকটি সুপারিশ পেশ করেছে। সুপারিশগুলো হলো, সড়ক দুর্ঘটনাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে জরুরিভিক্তিতে সড়ক দুর্ঘটনার প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে মালিক-শ্রমিক-যাত্রী-সরকার মিলে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ, ফিটনেসবিহীন মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন উচ্ছেদ করে মানসম্মত যানবাহনের ব্যবস্থা, চালকদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, চালকদের হাতে দৈনিক চুক্তি ভিক্তিক বাস, ট্রাক, হিউম্যান হলারসহ অন্যান্য যানবাহন ইজারা দেয়া বন্ধ, দেশের সব বেহাল সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত, বিআরটিএকে শক্তিশালীকরণ, পরিবহন খাতকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত এবং ফুটপাত নিমার্ণ ও সংস্কারসহ ফুটপাত দখল মুক্ত করে হাঁটার পরিবেশ নিশ্চিত করা।
এমইউ/ওআর/এমএস
Advertisement