একমাত্র সন্তান আশিকের জ্বর এসেছিল। ভেবেছিলেন রাত্রি নাগাদ সেরে যাবে। কিন্তু সময় যতই যেতে থাকে জ্বর বাড়তে থাকে। এক সময় কাঁপুনি শুরু হয় ১ বছর ৭ দিন বয়সী শিশু আশিকের।
Advertisement
কিন্তু ততক্ষণে গভীর রাত। এত রাতে কোথায় নিয়ে যাবেন সন্তানকে। তাই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ছেলের পাশে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভোরের আলোর অপেক্ষায় ছিলেন। এক সময় ভোরের আলো ফুটল ঠিকই, কিন্তু নিভে গেল ছোট্ট আশিকের জীবন প্রদীপ।
রোববার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে শিশু আশিকের মৃত্যুর খবর শুনে সবাই শোকার্ত হয়ে পড়েন। শিশুটির বাবা-মা, নানা নানী, খালা, ফুফু সবাই অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে যাকেই পাচ্ছিলেন তাকেই জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ করছিলেন আর বারবার বলছিলেন ভুল চিকিৎসায় আশিকের মৃত্যু হয়েছে।
আশিকের ফুফু শাহিদা জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আশিকের জ্বর হয়। তার বাবা-মা ভেবেছিলেন জ্বর হয়তো রাতে সেরে যাবে। তাই প্রাথমিকভাবে তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন তারা। কিন্তু রাত ৩টার দিকে আশিকের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। এত রাতে চিকিৎসক পাওয়া যাবে না ভেবে তারা সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এরপর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে শিশুটিকে নিয়ে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগের ২০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানোহয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করেন। কিন্তু দুপুর ২টা ১০ মিনিটে শিশুটি মারা যায়।
Advertisement
শিশুটির বাবা হৃদয়ের অভিযোগ, চিকিৎসকরা আশিকের ভালো চিকিৎসা করেননি। তিনি জানান, হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা প্রথমে যে চিকিৎসা দিয়েছেন তাতে তার শিশু সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। এরপর সে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তার অভিযোগ, চিকিৎসকরা শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে দেয়নি। এর কিছুক্ষণ পরই তার শিশুর অবস্থার অবনতি হয়।
হৃদয়ের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাদীখাঁর সেকান্দারনগরে। ঢাকাতে যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায় থাকেন পরিবার নিয়ে। পেশায় তিনি লেগুনা চালক।
সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ঢামেকের নার্স ও চিকিৎসকদের দ্বারে ঘুরে বারবার বলছিলেন তার শিশুটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে বারবার বোঝাতে চেয়েছেন যে তার শিশুটিকে কোনো চিকিৎসকই মারতে চাইবে না। কারণ কোনো চিকিৎসকের কাজ নয় এটা। চিকিৎসকরা বলছেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন শিশুটিকে বাঁচাতে। কিন্তু সন্তান হারা বাবার মন কোনো কিছুতেই বুঝতে চাইছে না।
শিশুটির মা কারিমুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামান্য জ্বর হইছিল আমার বাবুর, এই জ্বরে বুঝি আমার মানিক মইরা যাইবো? হেরা ভালো কইরা চিকিৎসা করেনি।’
Advertisement
একথা বলেই বুকফাটা আর্তনাদে আর কোনো কথা বলতে পারেননি তিনি। অশ্রুসিক্ত নয়ন ওড়না দিয়ে মুছছেন কাঁদছিলেন।
এ ব্যাপারে ঢামেকের ২১০ ওয়ার্ডের কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানান, শিশুটির চিকিৎসায় কোনো ধরনের অবহেলা কিংবা ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তিনি চিকিৎসাপত্র দেখিয়ে বলেন, তাকে এখানকার সিনিয়র চিকিৎসক প্রফেসর আব্দুল মতিন দেখেছেন। তার উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এখানে আনার পর তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। সেগুলোর রিপোর্ট আসার আগেই শিশুটি মারা গেছে।
তিনি বলেন, আদরের সন্তান হারিয়ে তারা হতাশ হয়ে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ দিচ্ছেন। এটা যেকোনো বাবা মা-ই করবে। কিন্তু তাদের যখন বুঝিয়ে বলা হয়েছে চিকিৎসার ব্যাপারে তখন তারা ‘সরি’ বলে তাদের শিশুটিকে নিয়ে গেছে হাসপাতাল থেকে।
শিশুটিকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিশুটির ফুফা ফরহাদ।
এসএইচ/এনএফ/জেআইএম