মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ সেই হতভাগ্য নবজাতক শিশুটির দেহে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলির নেতৃত্বে একটি দল বুধবার সকালে শিশুটির বুকের সামনে-পিছনে, বুকে ও গলার ক্ষতে এ অস্ত্রোপচার করেন। সাতদিনেরও কম বয়সী স্বাভাবিক নবজাতকের তুলনায় কম ওজনের এ শিশুটির শরীরে মোট ২১টি সেলাই পড়েছে।অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে ডা. শিউলী জানান, তারা শিশুটির দেহে সফল অস্ত্রোপচার করেছেন। অস্ত্রোপচার টিমে তাকে সহায়তা করেছেন ঢামেক অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. শফিকুল আলম, ডা. নাজমুস সাকিব ফেরদৌস ও ডা. ছাদরুদ্দীন আল মাসুদ।অস্ত্রোপচারের ঘণ্টা দেড়েক পর তাকে শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়া হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতক শিশুটির চিকিৎসায় আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দিচ্ছেন। ক্ষতস্থানে ইনফেকশন না হলে শিশুটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে বলে তারা আশা করছেন।ডা. শিউলী জানান, হতভাগ্য এ শিশুটি স্বাভাবিক ওজনের নবজাতকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। তাকে এখন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো জরুরি। কিন্তু শিশুটির মাও গুলিবিদ্ধ হয়ে মাদারিপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না।শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এখন তারা হন্যে হয়ে একজন দাই মা খুঁজছেন। ঢামেক হাসপাতালে দুই একদিনের মধ্যে যারা সন্তান জম্ম দিয়েছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে নবজাতক এই শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে রাজি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে আপাতত নবজাতক শিশুটিকে চামচে করে কৌটার গুঁড়োদুধ খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন।বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টা। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়েলটি ভবনের তৃতীয় তলায় ওটির সামনে অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষমান রোগীর স্বজনদের সবার দৃষ্টি পড়লো একটি ট্রলির ওপর। ট্রলিতে শুয়ে আছে ছোট্ট এক শিশু। সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো শিশুটিকে দেখে তাদের সবার প্রশ্ন কে এই নবজাতক। চিকিৎসকরা এতো ছোট শিশুটির আবার কী অপারেশন করবে!অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) বাইরে কথা হয় নবজাতক শিশুটির ফুফু শিউলী বেগমের সঙ্গে। ওই সময় বোরকা পরিহিত শিউলি ওটির বাইরে দরজায় দাঁড়িয়ে বার বার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন।তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার মাগুড়া শহরের দোয়াপাড়ায় দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় যুবলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত স্থানীয় যুবলীগ নেতা আলী হোসেনের গ্রুপ চা দোকানি বাচ্চু ভুঁইয়ার বাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে।এ সময় নাজমা আক্তার গুলিবিদ্ধ হন। ওই সময় আবদুল মোমিন ও মিরাজ হোসেন নামে আরো দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুল মোমিন মারা যান। শনিবার রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাজমা নবজাতক মেয়ে শিশু জন্ম দেন।হামলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শিউলী জানায়, বাচ্চু ভুঁইয়ার ছোট ভাই কামরুল ভুইয়া ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করে। ওই এলাকার সন্ত্রাসীরা কামরুলের পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে চাঁদা চাইলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় আলী, মুজিবুর ও আজিবুইরা কামরুলের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় প্রতিবাদ করলে বাচ্চু ভুঁইয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম, চাচা আবদুল মোমিনের ওপর গুলি চালায়।গুলিতে নাজমা বেগম আহত হলে তাকে স্থানীয় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা এক্সরে করে দেখেন নাজমার গর্ভজাত শিশুটিও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গত রোববার শিশুটিকে মাদারিপুর থেকে এনে ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়।এ প্রতিবেদককে ডা. শিউলি জানান, মায়ের গর্ভে থাকা শিশুটির বুকের পিছন দিক দিয়ে গুলি লেগে বেরিয়ে যায়। এ সময় গর্ভজাত শিশুটির বুকের সামনে পিছনে, হাতে, পায়ে ও গলা ও চোখে আঘাত লাগে। শিশুটির ডান চোখ ফুলে আছে। দৃষ্টিশক্তি আদৌ আছে কিনা এখনো তা বলা যাচ্ছে না।এছাড়া চোখেরসহ একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শিশুটিকে পরীক্ষানিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান।গতকাল সরজমিনে ২০৫ নম্বর শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে ঢুকে দেখা গেছে ওয়ার্ডে যখন তখন ভিজিটররা ঢুকছেন। চিকিৎসকরা এই নবজাতক শিশুটির ইনফেকশনের আশঙ্কা করলেও তাকে পৃৃথক কোথাও রাখার ব্যবস্থা করেননি।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা.শিউলী বলেন, পৃথক ওয়ার্ডে শিশুটিকে রাখতে পারলে ভালো হতো।এমইউ/আরএস
Advertisement