জাতীয়

বৃষ্টি মানেই যেখানে ‘বন্যা’

হালকা কিংবা মাঝারি বৃষ্টি হলেই সেখানে নেমে আসে ‘বন্যা’। আর ভারী বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। বলা হচ্ছে মিরপুরের কালসী রোডে সাংবাদিক আবাসিক এলাকার কথা। এই এলাকার ড্রেনেজ দিয়েই মিরপুরের সব পানি নেমে যায়, কিন্তু পার্শ্ববর্তী ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় এই ‘বন্যা’র সৃষ্টি হয়।

Advertisement

রোববার মৌসুমের প্রথম ‘বন্যা’ দেখল এই এলাকার বাসিন্দারা। কোমর পানি ঠেলেই যাতায়াতে বাধ্য হতে দেখা যায় মানুষজনকে, সেইসঙ্গে বাস, প্রাইভেটকার, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেলও। পায়ের জুতা হাতে ও পরনের কাপড় গুছিয়ে চলাফেরা করছেন স্থানীয়রা।

এলাকার লোকজন জানালেন, সড়কটির এমন নাজুক পরিস্থিতি দীর্ঘদিন থেকে। প্রতিবছরই এই অবস্থা থেকে উত্তরনের কথা বলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু তা শুধু আশ্বাসই থেকে যায়।

রোববার সকালের বৃষ্টিতে রাজধানীজুড়েই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিশেষ করে মিরপুরের অনেক সড়কেই দেখা দেয় তীব্র জলাবদ্ধতা। এর মধ্যে কালশীর এই জায়গার চিত্র ছিল ভয়াবহ।

Advertisement

সবেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে কোমর পানি ভেদ করে সড়কটি পার হচ্ছেন। অনেকের মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা প্রাইভেটকারেরও। পাশের উঁচু ফুটপাতে হাঁটুপানি ডিঙিয়েই সাধারণ পথচারীরা চলাফেরা করছেন। রাস্তার পাশের প্রায় সব দোকানেই উঠে গেছে পানি। এই অবস্থায় বেকায়দায় দোকানিরা।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক আবাসিক এলাকার ৮ নং রোডের বাড়ির মালিক রাশেদুল হাসান আমিন বলেন, গত বছরও এই আবাসিক এরিয়াতে রাস্তা নিচু ছিল। এখন উঁচু হয়েছে কিন্তু এতে সমস্যা আরও বেড়েছে। কারণ আগে বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমা হতো এখনবাড়ির নিচতলায় ঢুকে যাচ্ছে। কারণ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। সেটা তো থাকতে হবে।

একই অবস্থা সেখানকার দোকানগুলোর। দোকানদার শাহাদত হোসেন বলেন, এখানে বৃষ্টি নামলেই বেশিরভাগ দোকানে পানি ঢুকে যায়। রাস্তায় প্রায় কোমর পানি। এতে কোনো ক্রেতাও আসে না। ফলে বৃষ্টি নামলে বিক্রিও শূণ্যের কোঠায় নামে।

কালশী সড়ক হয়েই বিমানবন্দর সড়ক ধরে উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানের যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু সড়কটি দিয়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করায় পুরো এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে।

Advertisement

অন্যদিকে মিরপুর ১১ নম্বর থেকে জলাবদ্ধতা শুরু হওয়ায় এই মোড় দিয়ে যানবাহনগুলো ফিরতে চলতে হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এ কারণে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়কের ডানপাশে তীব্র যানজট দেখা যায়। তবে অন্যপাশ ছিল ফাঁকা।

স্থানীয় বাসিন্দা কমল জানান, কালশী খাল ও সাংবাদিক খাল দিয়েই এই এলাকার পানি প্রবাহিত হত, কিন্তু এক সময়ের খরস্রোতা খাল দুটি দখল হতে হতে এখন পরিণত হয়েছে সরু নালায়। ময়লা আর আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় খালের অধিকাংশ পয়েন্টে এখন প্রবাহ নেই। ফলে বৃষ্টি হলেই ছোটখাটো নদীতে পরিণত হয় পুরো খাল।

কালশী এলাকায় জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসীম এ খান বলেন, কালশীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ওই এলাকার সাংবাদিক খাল ও কালশী খালের সরু হয়ে যাওয়া। অনেক স্থানে পানির যে প্রাকৃতিক প্রবাহ ছিল তা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এ জন্য আমরা ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে কৃত্রিক উপায়ে সচল রাখার কথা বলে আসছি। আমরা ওই দুটি খালসহ ছয়টি খাল পুনঃখননের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছি।

এমএ/জেডএ/আরআইপি