বিনোদন

নাচে সেরা যতো অভিনেত্রী

যে নারী রাঁধেন সে নারী চুলও বাঁধেন। নন্দিত এই প্রবাদে নারীর বহুমুখী প্রতিভা বা সামর্থ্যকেই সমর্থন দেয়া হয়েছে। তেমনি বহুমুখী প্রতিভার অনেক নারী শোবিজে রয়েছেন যারা একসঙ্গে অনেক গুণে নিজেদের বিকশিত করেছেন। তাদের মধ্যে বেশ লম্বা একটা তালিকা করা যায় যারা নাচ ও অভিনয়ে সমানতালে পারদর্শি। তারা অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও নাচের জন্য পেয়েছেন আলাদা খ্যাতি। নাচে পেশাদারীত্ব এখনো উল্লেখ করার মতো এদেশে। তাই এইসব নৃত্যশিল্পীরা অভিনয়কেই করে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের মূল পেশা। তবে নাচকে তারা ভালোবাসেন, ধারণ করেন শিল্পবোধের অনন্য এক চর্চায়। আজ বিশ্ব নৃত্য দিবসে সেইসব ‘নৃত্য-অভিনয়শিল্পী’দের নিয়েই এই আয়োজন-

Advertisement

লায়লা হাসানবহুমুখী প্রতিভার দারুণ এক দৃষ্টান্ত লায়লা হাসান। তার শুরুর সময়টাতে নারীদের শিল্পচর্চার পথ আজকের মতো মসৃন ছিলো না। তবুও নিজেকে একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে লায়লা হাসান প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একজন অভিনেত্রী হিসেবে সমাদৃত হলেও নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসানের মর্যাদা অন্য এক উচ্চতায়। বাংলাদেশে নারীদের নাচের বিস্তারে লায়লা হাসানের নাম চিরকাল লেখা থাকবে ভালোবাসার কালিতে।

সাদিয়া ইসলাম মৌএই তালিকায় সবার আগে চলে আসবে দেশের সুপার মডেল ও এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের নামটি। মৌ-ভক্ত মাত্রই জানেন, মডেলিং ও অভিনয়ে তুমুল জনপ্রিয় মৌ এই দেশের শোবিজে নৃত্যশিল্পী হিসেবেও সফল একটি নাম। টিভির পর্দা কিংবা কোনো অনুষ্ঠানের মঞ্চে মৌকে নাচতে দেখা যে কোনো দর্শকের জন্যই বিশেষ প্রাপ্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মডেলিং এবং নাচ এই দুই আলাদা শিল্প মাধ্যমকে মৌ পেয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। তার মা রাশা ইসলামকে বলা হয় বাংলাদেশে স্টিল অ্যাড মডেলিংয়ের পথিকৃত। সংস্কৃতিমনা পরিবারে বেড়ে উঠেছেন মৌ। শৈশব থেকেই নাচে শিক্ষা নিয়েছেন, দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন দেশের নৃত্যাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। ধ্রুপদী, প্রচলিত সব ধরনের নাচেই তিনি সাবলীল।

Advertisement

বিজরী বরকতউল্লাহ দেশের মডেলিং ও অভিনয়ের আঙিনায় নন্দিত এক নাম। তবে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবেও বিজরী অনন্য। নাচ দিয়েই শুরু হয়েছিলো তার শিল্পচর্চার পাঠ। মা জিনাত বরকতউল্লাহ অনেক স্বপ্ন নিয়েই তাকে নৃত্য শিখিয়েছিলেন। কিন্তু শেষতক নাচের শিল্পীর পরিচয় ছাপিয়ে একজন অভিনেত্রী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হন তিনি। বিজরী এজন্য দায়ী করেন এদেশে নাচের পেশাদারীত্বের অভাবকেই। তার মতে বিশেষ বিশেষ দিবস এলে কিংবা বছরে দু’একটি অনুষ্ঠানে নাচ করে জীবন চলে না। তাই মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। তবে তিনি সবসময়ই বলে থাকেন- তিনি আগে একজন নৃত্যশিল্পী তারপর অভিনেত্রী। নাচ তার রক্তে মিশে আছে।

অপি করিমটিভি নাটকের শক্তিশালী একজন অভিনেত্রী তিনি। তার সমসাময়িক মঞ্চ ও টিভি- দুটি মাধ্যমেই অভিনয়ের রোশনাই ছড়িয়েছেন তিনি। আগের মতো নিয়মিত না হলেও হঠাৎ অপি করিমের উপস্থিতি যে কোনো নির্মাণ বা অনুষ্ঠানকে ভিন্ন মাত্রা দেয়। এই অপি করিম মডেলিং ও অভিনয় দিয়ে প্রতিষ্ঠা পেলেও নাচে রয়েছে তার আলাদা গ্রহণযোগতা। শাস্ত্রীয় নাচের তালিম নিয়েছেন তিনি দীর্ঘদিন। তার নাচ মুগ্ধ করে যায় দর্শককে।

তারিন জাহানমডেলিং দিয়ে বাজিমাত করেছেন। একজন অভিনেত্রী হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। নাটক-টেলিছবিতে তারিনের উপস্থিতি মানেই বাড়তি আকর্ষণ। আগের মতো নিয়মিত নন শোবিজে। তবে বিশেষ বিশেষ দিবসগুলোতে দেখা মেলে তার।

অভিনেত্রী তারিন নাচের জন্যও জনপ্রিয়। নাচের প্রতি রয়েছে তার বাড়তি ভালো লাগা। নানা অনুষ্ঠানে বহুবার নাচের তালে দর্শক-ভক্ত মাতিয়েছেন তিনি। তার দাবিতে - ‘নাচ আমার ভালোলাগা, এটা আমার রক্তে মিশে গেছে।’

Advertisement

নাদিয়া আহমেদমিষ্টি হাসির দক্ষ এক অভিনেত্রী হিসেবেই নাদিয়া আহমেদের পরিচিতি। তবে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবেও তিনি সামদৃত। মূলত নাচের মাধ্যমেই বিনোদন জগতে পথ চলা শুরু হয় তার। দীর্ঘদিন টিভি অনুষ্ঠানে শিশুশিল্পী হিসেবে তার নাচ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক। এরপর বিজ্ঞাপন দিয়ে আলোচনায় আসেন এবং সেই সূত্রেই নিজেকে অভিনয়ে প্রতিষ্ঠত করেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত নৃত্যচর্চা করে চলেছেন। নাচের স্কুলের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন তিনি।

মেহবুবা মাহনুর চাঁদনি‘জয়যাত্রা’, ‘লালুসালু’র মতো সাড়া জাগানো দুটি সিনেমায় অভিনয় এবং এর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন চাঁদনি। তবে তার শিল্পচর্চা শুরু হয়েছে নাচের মাধ্যমে। নাচেই প্রথম কোনো স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি। নাচের জন্য দেশে-বিদেশ দাপিয়ে বেরিয়েছেন। হঠাৎ করেই শুরু করলেন অভিনয়। এরপর এখানেও পান তারকাখ্যাতি।

রুমানা রশিদ ঈশিতাঈশিতার শিল্পচর্চা ও শোবিজের ক্যারিয়ার দুটোই অভিনয় দিয়ে। তবে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবেও তিনি জনপ্রিয়।বিটিভি'র নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় 'ফালানি' চরিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় এখনো দর্শক হূদয়ে অটুট। ঈশিতার প্রথম অভিনীত নাটক ছিল ইমদাদুল হক মিলনের রচনায় ও ফখরুল আবেদীনের পরিচালনায় 'দু'জনে'। এই নাটকে তিনি আফজাল হোসেন ও শান্ত ইসলামের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন।

জাকিয়া বারী মমনাচের কারণে নতুন কুঁড়ি পুরস্কার, নাচের কারণেই ঢাকা আগমন। তবে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার হওয়ার পর একজন অভিনেত্রী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন জাকিয়া বারী মম।

টিভির নিয়মিত মুখ এখন চলচ্চিত্র পরিচালকদের কাছেও আদরনীয়া। তার অভিনীত ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ সাফটা চুক্তির আওতায় প্রথম সিনেমা হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেয়েছে। প্রথম সিনেমা তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’-এর জন্য পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অভিনয়ের এই ব্যস্ততার ফাঁকেও সুযোগ পেলেই নানা অনুষ্ঠানে নিজেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মেলে ধরেন এই সুন্দরী।

বিদ্যা সিনহা মিমএখন তার নামের আগে যোগ হয় চিত্রনায়িকা। তবে বিদ্যা সিনহা মিমকে এক কথায় বলা চলে নৃত্য পটিয়সী অভিনেত্রী। এই সময়ের হার্টথ্রব নায়িকা তিনি। নাচে এতোটাই সাবলীল যে, তার মুদ্রা দেখে দিপিকা পাড়ুকোনও মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।

মিম নাচের মাধ্যমেই শুরু করেছিলেন শিল্পচর্চা। এরপর লাক্স সুপারস্টারের মুকুট মাথায় নিয়ে তিনি বনে যান অভিনেত্রী। এখন তিনি সমান তালে দাপিয়ে বেড়ান মঞ্চ, টিভি, সিনেমার জগত। আবার লেখালেখির প্রতিভাও প্রকাশ করেছেন।

আশনা হাবিব ভাবনাহালের জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম একজন তিনি। তবে শিশুকাল থেকেই নাচ শিখেছেন। নিজেকে একজন নৃত্যশিল্পী ভাবতেও পছন্দে করেন। নাচের শিল্পী হয়ে দেশ-বিদেশেও পাড়ি দেন আশনা হাবিব ভাবনা।

নিয়মিতই করছেন নাটক-টেলিছবি। অনিমেষ আইচের মতো পরিচালকের মাধ্যমে ঘটছে সিনেমায় অভিষেক। তবে এতসবের মাঝেও নাচ নিয়ে তার আগ্রহের কমতি নেই। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নাচের ওপর শিক্ষার পাশপাশি গুরু-শিষ্য পরম্পরায় এখনও শিখছেন।

আনিকা কবীর শখআনিকা কবীর শখ বিজ্ঞাপন ও টিভি নাটকের মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। কিন্তু শৈশব থেকেই নাচের তালিম নিয়েছিলেন শখ। নিজেকে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে মডেলিং আর অভিনয়ের জনপ্রিয়তার জন্য সেখানেই গড়েছেন ক্যারিয়ার। নাটক-টিভিসির পাশাপাশি কাজ করেছেন চলচ্চিত্রেও।

তবে নাচকে ছাড়েননি। অভিনয়ের ব্যস্ততার ফাঁকেই নাচের জন্য সময় করেন তিনি। সোহেল রহমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে নাচের দল নিয়ে রীতিমতো দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি।

এবং মুনমুন আহমেদতিনি সুন্দর। তার হাসি হৃদয়ে সুখের মতোন ব্যাথা দেয়। তার নাচ মুগ্ধ করে শিল্পবোধে সমৃদ্ধ মনকে। এদেশের নাচের আঙিনায় মুনমুন আহমেদ অনন্য এক নাম। নাচ দিয়েই তিনি শোবিজে আসেন, নাচ দিয়েই পেয়েছেন খ্যাতি। শখের অভিনয় শুরু করেছেন অতি সম্প্রতি। হুমায়ূন আহমেদের নাটক-চলচ্চিত্রে তাকে দেখা গেছে। তাই নতুন প্রজন্মের দর্শকের কাছে একজন অভিনেত্রী হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত। কিন্তু মুনমুন আহমেদ মূলত একজন আপাদমস্তক নৃত্যশিল্পী।

নৃত্যের জন্যই ভারত, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, কেনিয়া, জাম্বিয়া, নাইজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইরাক, কাতার ও লিবিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে ভ্রমণ করেছেন তিনি। বাংলাদেশের ৬ জন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নৃত্যধারার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও মুনমুন। এই সংস্থা বাংলাদেশের নৃত্য ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

এলএ/জেআইএম