অর্থনীতি

নিত্যপণ্যের বাজার : শবে বরাত-রোজার প্রভাব উসকে দিল বৃষ্টি

নিত্যপণ্যের বাজারে পবিত্র শবে বরাত ও রোজার প্রভাব পড়েছে। চিনি ছাড়া প্রায় সব পণ্য দাম কমবেশি বেড়েছে। এর মধ্যে রোববারের বৃষ্টি এই ঊধ্বমুখী বাজারকে আরও একটু উসকে দেবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, রমজানে ইফতারে প্রয়োজন হয়, এমন সবজি বা কাঁচামালের দাম বেড়েছে ব্যাপকভাবে। এর মধ্যে বেগুন, পেঁপে, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুনের দাম বেড়েছে। তবে মাছ ও ডিমসহ কিছু পণ্যের দাম এখনও আগের মতোই আছে। রাজধানীর মিরপুরের মুসলিম বাজারের বিক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই পাইকারি বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ, রসুনের দাস গত সপ্তাহের চেয়ে পাইকারি বাজারে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া কাঁচামালের দামও বাড়তি।

তিনি বলেন, শবে বরাতের পর রোজাকে কেন্দ্র করে এই দাম বাড়তে পারে। তবে আজ (রোববার) যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে অনেক বাজারে কাঁচামাল প্রবেশ করতেই পারেনি। দু’একদিন এভাবে চলতে থাকলে বাজারে দেখবেন আগুন লাগবে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানে প্রয়োজনীয় প্রধান পণ্যগুলোর দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এসব পণ্যের দাম কেজিতে ৮-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮ টাকা। ছোলাও বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১০ টাকা বেশি দরে। একই সঙ্গে, অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাচা পেঁপের দাম। গত সপ্তাহে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া এই সবজিটির দাম এক লাফে ৭০ টাকায় পৌঁছেছে। বাজার করতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোহেল বলেন, গত সপ্তাহে ৩০ টাকায় পেঁয়াজ কেনা গেছে। অথচ এখন তা কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকায়। শবে বরাত কিংবা রোজা এলেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরাও কিনতে বাধ্য। পেঁপের পাশাপাশি এখন দামি সবজির তালিকায় রয়েছে বেগুন ও কাকরল। আগের সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

এ প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা রুবেল হোসেন বলেন, ‘অনেক ক্রেতাও রমজানকে সামনে রেখে মজুদ করছেন। আবার অনেক খুচরা বিক্রেতারা এমনিতেই কিছু দাম বাড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, আড়তদাররা সারা বছরের জন্য পেঁয়াজ মজুদ করে রাখছেন। আবার পাবনা থেকে এখন আমাদের ১৪শ টাকা মণে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। ঢাকায় নিয়ে আসতে আসতে কেজিতে দাম পড়ছে ৩৭ টাকা। বিক্রি করছি ৩৮ টাকায়।

তিনি জানান, পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পাল্লায় (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ১১০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি)।

রমজানে আরেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছোলার দামও বেড়েছে। বাজারে প্রকারভেদে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা।

Advertisement

খুচরা বিক্রেতা কমল বলেন, শবে বরাতের পরেই ছোলার দাম ১০০ টাকা হয়ে যাবে। তবে পাইকারি দোকানগুলোতে ছোলার দাম স্থির রয়েছে। আর মসুর ডাল ৬০ থেকে ১০০ টাকা, বেসন ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

একই ধরনের কথা জানিয়েছেন ডাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতা শফি মোহাম্মদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রচুর মজুদ আছে। এজন্য ডাল বা ছোলার পাইকারি বাজার বাড়েনি। হয়তো বাড়বেও না। যদি বাড়তো তাহলে এতো দিন বেড়ে যেত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দাম বাড়িয়েছে খুচরা বিক্রেতারা। তারা বেশি লাভ করছে। কিন্তু আমরা করছি না। এখন মজুদ মাল ছেড়ে দিতে পারলে বাঁচি।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহ ঘুরে রসুনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়।

তবে স্থিতিশীল রয়েছে সবজির বাজার। আলু ২০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, শশা ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ঢেঁরস ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও কাঁচামরিচ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে শিম ও ঝিঙা । এ ছাড়া আগের সপ্তাহের মতো শসা ২০-২৫ টাকা, ছোট আকারের কাঁচা মিষ্টিকুমড়া ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে দাম বেড়েছে গাজরের। গত সপ্তাহে ২৫-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম বেড়ে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

লাল শাক, সবুজ ডাটা শাক, পাট শাক, কলমি শাক আগের সপ্তাহের মতো ৫-১০ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে। পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ শাক। আর নতুন আসা মুলা শাক বিকি হচ্ছে ১০ টাকা আটি।

এদিকে বাজারে স্থির রয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর চালের বাজার স্থির বলছেন বিক্রেতারা। মিনিকেট ৬২ টাকা, আটাশ ৪২ থেকে ৪৩ টাকা, স্বর্ণা ৪০, নাজির ৫৪ টাকা, কাটারিভোগ ৭২ থেকে ৭৬ ও চিনিগুঁড়া চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের বড় অংশের ভাষ্য, পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ লাখ ৬৯ হাজার টন ভোজ্য তেল, ১৩ লাখ ৭ হাজার টন চিনি, ১ লাখ ৩০ হাজার টন মসুর ডাল, ৪ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ ও ২ লাখ ৪৭ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে।

এমএ/এসআর/এমএস