নুরুল আলম হোরন (৪১) নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক। দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেব কাজ করতে গিয়ে স্মৃতির পাতায় যোগ হয়েছে অসংখ্য ঘটনা। সেই স্মৃতিগুলো এখনও মনকে নাড়া দেয় তার।
Advertisement
আলাপকালে তিনি জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজেক্টের অধীন তিনি প্রথম অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে যোগদান করেন নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার দুর্গম চর এলাকা চরআলগীতে। সৌদি সরকারের আর্থিক অনুদানে নির্মিত এ হাসপাতালে ৫ থেকে ৬ বছর কাজ করার পর ২০১২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ওই বছরেরই জুলাই মাসে বদলি হয়ে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় আসেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সেখানে থাকার পর ২০১৬ সালে সুবর্ণচর উপজেলার চরজাব্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে বদলি হন। পরবর্তীতে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পর চলতি মাসে জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে যোগদান করেন।
স্মৃতিচারণ করে বলেন, সুবর্ণচর উপজেলার চরজাব্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালে দুর্গম চরবাগ্গা থেকে একজন প্রসূতিকে নিয়ে হাসপাতালে আসার পথে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে এক পর্যায়ে তাকে অ্যাম্বুলেন্সটিকে একটি বাগানে নিয়ে যেতে হয়। গাড়ি থেকে নেমে আশপাশের কয়েকজন নারীকে ডেকে আনেন এবং গাড়ির মধ্যেই সন্তান প্রসব করানো হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুটি ছিল ছেলে সন্তান। তাৎক্ষণিক ওই নারী তাকে ১০০ টাকা বকশিস দিয়েছিলেন। সে বকশিসের টাকা আজও তিনি যত্ন করে তুলে রেখেছেন।
ব্যক্তিজীবেন নুরুল আলম দুই সন্তানের বাবা। নিজে পড়া লেখা নবম শ্রেণী পর্যন্ত করলেও বড় মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে আর ছোট মেয়ে অস্টম শ্রেণিতে পড়ে। জীবনে তেমন কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। বাবা ছিলেন একজন ড্রাইভার। তার রেখে যাওয়া বসতঘরেই তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকেন। সরকার থেকে যে বেতন পান তাতে তিনি খুশি।
Advertisement
তিনি জানান, এ দেশের মানুষ এখনও সচেতন নয়। বিশেষ করে রাস্তায় যখন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স চলে তখন তাদের বোঝা উচিত এটি জরুরি সেবা দিতে যাচ্ছে। রাস্তায় যানজটে পড়ে অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ে রোগী পরিবহনে তাদের অসুবিধা হয়। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা তাদেরকেই গালমন্দ করে।
গত দেড় মাস আগে তার বাবা স্ট্রোক করেছিলেন। তিনি তখন বাড়িতে বাবার পাশেই ছিলেন। তার এক সহকর্মীকে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু সেটিও সঠিক সময়ে তার বাড়িতে যেতে পারেননি। তাই বিপদের সময় অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ার কষ্ট ও ক্ষোভ তিনি বোঝেন। আর তাই কেউ কিছু বললে চুপ করে থাকেন।
সবশেষে তিনি বলেন, একজন রোগী যন্ত্রণা ও কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর যখন ভালো হয়ে বাড়ি ফিরে যান আর যাওয়ার সময় তাকে দেখে হাসি মুখে কথা বলেন তখন মনে হয় অ্যাম্বুলেন্স চালক হওয়ার স্বার্থকতা এখানেই।
এফএ/জেআইএম
Advertisement