চুরির অপবাদ দিয়ে আলমগীর হোসেন (২০) নামে এক যুবকের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে যুবলীগের এক নেতা। এ ঘটনার পর ওই যুবক শরীরে ভাঙা হাড় নিয়ে বন্দি ঘরে জীবনযাপন করছেন। একই সঙ্গে অভাব অনটনের কারণে পরিবারটি ওই যুবকের চিকিৎসা করাতে পারছে না।
Advertisement
গত ৯ এপ্রিল রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেপিরবাড়ি গ্রামের এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত এম এ কাওসার গফরগাঁও উপজেলা যুবলীগের নবগঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক।
আহত যুবক আলমগীর হোসেন (২০) নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার ইসপিতাপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। আলমগীর পরিবারসহ মা-বাবার সঙ্গে মুলাইদ এলাকার হোসেন মৃধার বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় জামান ফ্যাশন নামের একটি কারখানায় আয়রনম্যান পদে চাকরি করতো। তার বাবা উপজেলার মুলাইদ গ্রামের শফিকের মোড় এলাকার একজন চা দোকানি।
বর্বরতার শিকার আলমগীর হোসেন জানান, গত ১৩ বছর ধরে শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যা রয়েছে। বাবা চা দোকান করতো। তিনি জামান ফ্যাশন নামের একটি কারখানায় আয়রনম্যান পদে চাকরি করতেন। গত ৯ এপ্রিল রাতে কারখানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে শ্রীপুরের টেপিরবাড়ি গ্রামের এক সড়ক থেকে আলমগীরকে ধরে নিয়ে যান যুবলীগ নেতা এম এ কাওসার। এরপর সারারাত তার উপর চলে নির্যাতন।
Advertisement
সেখানে তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সারারাত ধরে রড দিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তার ডান পায়ের হাড় ভেঙে যায় ও সারা শরীরে জখম হয়। মারধরের এক পর্যায়ে যুবলীগ নেতা কাওসার তার বুকের ও পায়ের হাঁটুর উপর গিয়ে দাঁড়ায়। পরদিন সকালে বাড়ির বাইরে একটি গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় আলমগীরকে। এ সংবাদ শুনে তার স্বজনরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
সেখান থেকে দুই দিন পর ওই যুবলীগ নেতা তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বের করে হাসপাতালের কাগজপত্র জোর করে নিয়ে যায়। পরে এই যুবলীগ নেতা কাওসার তার লোক দিয়ে আলমগীরকে ময়মনসিংহের একটি ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করেন। এসময় কয়েকটি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আপোষের প্রস্তাব দেয় কাওসার। আপোষের প্রস্তাব আলমগীরের পরিবার প্রত্যাখান করায় জোরপূর্বক সেখান থেকে তাকে বের করে দেয়। এরপর থেকে পরিবারটি কার্যত অবরুদ্ধ। ওই যুবলীগ নেতার হুমকিতে গত কয়েকদিন ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আলমগীরও চিকিৎসার জন্য বের হতে পারছেন না।
আলমগীর আরও জানান, মারধরের সময় আমি বারবার বলেছি আমি চুরি করি না, আমি কাজ করে খাই। তারা আমার কোনো কথা শুনেনি। কয়েকবার পায়ে ধরেছি, তাতেও মন গলেনি। সারারাত আমাকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম, জ্ঞান ফিরে আসার পর দেখি আবার মারা হচ্ছে। এদিকে আমাকে মেরে গুরুতর আহত করে আবার সকালে খবর দিয়ে পুলিশ এনে আমাকে তাদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার অবস্থা খারাপ থাকায় পুলিশ আমাকে নেয়নি। তারা আমাকে এ অবস্থায় ফেলে চলে গেছে।
আলমগীর হোসেনের বাবা কালাম মিয়া জানান, একদিকে আমার ছেলেটাকে তারা এমনভাবে মারলো আবার তার উপর এলাকা ছাড়ার জন্য এখন হুমকি দিচ্ছে। ওই যুবলীগ নেতার হুমকিতে গত ১৫ দিন ধরে দোকান খুলতে পারি না। পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিসহ জীবন কাটাতে হচ্ছে।
Advertisement
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা এমএ কাওসার মুঠোফোনে প্রথমে মারধরের কথা স্বীকার করলেও পরে অস্বীকার করে বলেন, ছেলেটাকে চুরির কাজে হাতেনাতে ধরেছি। তাই সাধারণ জনগণ তাকে মারধর করেছে। পরে আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তাছাড়া তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়েছি।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল তবে ছেলেটিকে যুবলীগের এই নেতা মারধর করেননি। চুরির অভিযোগে সাধারণ জনগণের পিটুনিতে ছেলেটি আহত হওয়ায় তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সাধারণ লোকজনকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
শিহাব খান/এমএএস/জেএইচ