যশোরের বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলার গ্রামেগুলোর বাগানে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। আম পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ইউরোপের বাজার ধরতে উত্তরণ সফল ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আম গাছে বিশেষ যত্ন নিচ্ছেন তারা। আর কিছু দিনপরেই বাজারে আম আসবে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আম বাগান কিনে পরিচর্যা করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করেন চাষিরা।
Advertisement
জানা যায়, চলতি বছর বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলায় ৩ শত ৯০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আমের বাগান রয়েছে এক হাজার ৫শ'টি। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এ এলাকায় গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, ন্যাংড়া, গোপালভোগ, বোম্বাই, আম্রপালিসহ নানা জাতের আম বাগান রয়েছে। চাষিরা নিয়মিত এসব বাগানের আম পরিচর্যা করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে এলাকার চাহিদা মিটিয়েও আম বিদেশে রফতানি হবে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে আমের ন্যায্য মূল্য ও এলাকায় একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় আম চাষিরা।
দীর্ঘদিনের আমচাষী শার্শার কায়বা গ্রামের শাহিন মিয়া বলেন, উত্তরণ সফল ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সহযোগিতায় আম চাষ করে দেশে-বিদেশের মানুষের কাছে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম পাঠাতে পারি সে উদ্দেশ্য নিয়ে এবার বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গাছের ফ্লালামন প্যাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যবহার করেছি। তিনি এবার ১৪ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছেন। তাতে খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বাজারজাত ভাল হলে সাত লাখ টাকা লাভ করবেন বলে জানান তিনি।
Advertisement
সাতক্ষীরার কলারোয়ার সলিডারিডাড নেটওয়ার্কের প্রোগ্রাম অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উত্তরণ সফল ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সহযোগিতায় যশোরের শার্শা উপজেলায় ১৫০ জন কৃষককে রফতানিযোগ্য ও বালাইমুক্ত আম উৎপাদনের জন্য চারবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ আম দেশের বাইরে নেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে ইসলাম গ্রুপসহ ১৩টি রফতানি প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হয়েছেন এবং কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি তারা মাঠও পরিদর্শন করেছেন। আশা করছি শার্শা উপজেলা থেকে এ বছর এক হাজার ৫ শত মেট্রিক টন আম সংগ্রহ করে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করতে পারবো। এছাড়া কারিগরি সহযোগিতা হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সব সময় আমের বাগান মনিটরিং করছেন বলেও জানান তিনি।
কলারোয়ার উত্তরণ এনজিও‘র ফিন্ড অফিসার কামরুল ইসলাম জানান, নিরাপদ ও বালাইমুক্ত রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের জন্য সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া এবং উত্তরণ সফল প্রকল্পের আওতায় যশোরের শার্শা উপজেলায় ১৫০ জন চাষীকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের জন্য আমচাষিদের লেমন ট্যাপ ব্যবহারের করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। লেমন ট্যাপ ব্যবহার করে মাছি পোকা দমনের মাধমে আম তৈরি করছে এবং তৃণমূল পর্যায়ে যে সব চাষি আছে তাদের কাছ থেকে আম কিনে রফতানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানান, বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলায় ৩৯০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার চাষি আম চাষের সঙ্গে জড়িত আছে। আশা করছি এ সকল বাগানে প্রায় দেড় হাজার মেট্রিক টনের অধিক আম উৎপাদিত হবে। যা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে রফতানি হবে। আম চাষিদেরকে এনএটিপি ফেস-২ এর আওতায় প্রশিক্ষণসহ তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের উপকরণ দিয়ে সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মো. জামাল হোসেন/আরএ/এমএস
Advertisement