জাতীয়

নারীর অধিকার আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর চার দফা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতা কাজে লাগাতে এবং তাদের সহযোগিতা ও অধিকার তুলে ধরতে একটি নতুন বৈশ্বিক জোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য গ্লোবাল সামিট অব উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীদের সহযোগিতা ও তাদের অধিকার তুলে ধরতে আমাদের একটি নতুন জোট গঠন করতে হবে। লাখ লাখ নারীর স্বার্থে অবশ্যই আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ নিয়ে একত্রে কাজ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর উপস্থাপিত চার দফা হলো- নারীর সক্ষমতা নিয়ে প্রচলিত যে ধারণা সমাজে রয়েছে, তা ভাঙতে হবে; প্রান্তিক অবস্থানে ঝুঁকির মুখে থাকা সেসব নারীদের কাছে পৌঁছাতে হবে, যারা আজও কম খাবার পাচ্ছে, যাদের স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না, যারা কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কোনো নারী, কোনো মেয়ে যেন বাদ না পড়ে; নারীদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে তাদের সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে এবং জীবন ও জীবিকার সব ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।

সিডনিতে ‘গ্লোবাল সামিট অন উইমেন’-এ শুক্রবার জমকালো এক অনুষ্ঠানে নারী নেতৃত্বে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেয়া হয় শেখ হাসিনার হাতে। এ সময় দেয়া বক্তব্যে তিনি চার দফা পেশ করেন।

Advertisement

‘গ্লোবাল উইমেন সামিট’র প্রেসিডেন্ট আইরিন নাতিভিদাদের কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মাননা গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসি) অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইরিন নাতিভিদাদ। সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় দেড় হাজার নারী নেতৃত্ব যোগদান করেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কার গ্রহণকালে নারী নেতৃবৃন্দ বেশকিছু সময় দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানান। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব উইমেন বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের জন্য শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করে।

এর আগে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড- ২০১৮’ গ্রহণ করে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গভীর সম্মানিত বোধ করছি এবং এ উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড বিশ্বের নারীদের উৎসর্গ করছি, যারা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারী চেঞ্জমেকারদের দেখতে পাওয়া আমার জন্য বিশাল আনন্দের বিষয়।’ মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করায় তিনি গ্লোবাল সামিট উইমেন কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি সবাইকে প্রান্তিক, দুস্থ, যারা অনাহারী এবং স্কুলে যেতে অনাগ্রহী ও নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়াতে গতানুগতিক লিঙ্গ-বৈষম্য থেকে ফিরে এসে নারীর সক্ষমতা বাড়াতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, কোনো মেয়ে ও নারী পিছিয়ে পড়ে থাকবে না। তিনি বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা দূরীকরণসহ উৎপাদনশীলতা জোরদারের আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল ড্যামে কুইনথিন ব্রাচি এবং দেশটির নারী কাউন্সিল নানিয়াজারার সিইও পিৎজানজারা ইয়ানকুন জাজারারকেও অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। শীর্ষ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট আইরিন নাতিভিদাদ অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশী নারীদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশী নারীরা ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পযর্ন্ত প্রতিটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে নারীর মর্যাদা এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমরা তাদেরকে বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের সকল স্তরে পুরুষের পাশাপাশি সম-অধিকার দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু মেয়েদের জন্য অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখা পড়ার সুযোগ এবং সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা করে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে তার সংগ্রাম ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, পরিবারের ১৮ জন সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি এবং তার বোনকে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধা দেয়া হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময়ে তারা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। ছয় বছর তাদেরকে বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে বাধ্য করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে এসে তিনি জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ শুরু করেন।

তিনি বলেন, তার দল ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর জনগণের কল্যাণে অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। এসব কর্মসূচির সুফলের জন্য জনগণ ২০০৮ সালে এবং ২০১৪ সালে তার দলকে পুনরায় নির্বাচিত করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৭ সালে ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ঘোষণা করে। তিনি আরও বলেন, ফোরাম নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশকে ১৫৫টি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থান দেয়া হয়।

এমএআর/জেএইচ