উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নেতার মধ্যে যখন ঐতিহাসিক বৈঠক হলো। ১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে যে সামরিক রেখা এই উপদ্বীপকে বিভক্ত করে রেখেছে, উত্তর কোরিয়ার প্রথম নেতা হিসেবে ওই রেখা পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে পা রেখেছেন কিম জং-উন। এরপরেই দুই নেতা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে সম্মতি জানিয়েছেন। দুই কোরিয়ার এই বৈঠকের পর একটা প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে যে, এর পেছনে কৃতিত্ব আসলে কার?
Advertisement
কেউ কেউ দাবি করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং দক্ষিণ কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট দু'জনেই একমত যে, উত্তর কোরিয়ার সাথে শান্তি আলোচনার কৃতিত্ব ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই প্রাপ্য।
এর জবাবে অনেকে বলছেন, এই আলোচনায় আসলে কি প্রভাব ফেলেছে, তা শুধু ঐতিহাসিক দলিলপত্র থেকেই প্রতীয়মান হবে। তবে তথ্যপ্রমাণ থেকে আভাস পাওয়া যায় যে দক্ষিণ কোরিয়াই উত্তরের সাথে আলোচনাকে উৎসাহিত করেছিল। আর এর সাথে ছিল চীনের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার চাপ।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে কোরীয় দ্বীপে পরিবর্তনের আভাসের কৃতিত্ব নেবার আভাস দিয়েছেন অনেক আগেই। চলতি বছরের জানুয়ারির ৪ তারিখে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেন, ব্যর্থ বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে নানা কথা বলছে। কিন্তু আমি যদি শক্ত অবস্থান না নিতাম এবং উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের অঙ্গীকারের কথা প্রকাশ না করতাম তাহলে এই সংলাপ-আলোচনা হতো এমন কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?
Advertisement
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জ্যা-ইনও এ কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন, যে উত্তরের সাথে এই শান্তি আলোচনা হবার পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পে বড় কৃতিত্ব পাওনা আছে। তার কথায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা ও চাপের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
এ বছরই মে বা জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটাই হবে উত্তর কোরিয়ার কোন নেতার সঙ্গে ক্ষমতাসীন কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম বৈঠক।
হয়তো এই আলোচনা কোরীয় দ্বীপে উত্তেজনা কমিয়ে আনবে। ৬৮ বছরের পুরনো কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে একটি শান্তি চুক্তিও হতে পারে। উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সালে তাদের প্রথম পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়।
তারপর থেকেই জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার ওপর বহু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার অনেকগুলোই মার্কিন প্রস্তাবে। এরপর দিন দিন এসব নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর থেকে কঠোরতর হয়েছে। কিন্তু যা উত্তর কোরিয়াকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে তা হলো চীনের অবস্থান পরিবর্তন। কারণ উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই হয় চীনের সাথে। এর আগে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো চীন খুব কমই প্রয়োগ করতো। কিন্তু গত বছর থেকে চীন এসব নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে শুরু করেছে বলে মনে করা হয়।
Advertisement
গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, কিম জং উন যে তার ডেস্কে সর্বক্ষণ পারমাণবিক বোতাম থাকার কথা বলেন, এই খেতে না পাওয়া দেশটির শাসককে কি কেউ জানিয়ে দেবেন যে আমারও একটা পারমাণবিক বোতাম আছে যা আরো অনেক বড়, আরো ক্ষমতাশালী।
ট্রাম্পের আগের দুই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জর্জ বুশও অবশ্য উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের কথা বলেছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্বতন প্রেসিডেন্টদের কেউ কেউ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কড়া নীতির কথা এবং অন্যরা আলোচনার কথা বলেছেন। দু'জন দক্ষিণ কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট উত্তরের নেতার সাথে বৈঠক করেছেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জ্যা ইনের সময় এবার শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার ক্রীড়াবিদদের আসা এবং এক পতাকার নিচে প্যারেড করাটা ছিল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
টিটিএন/পিআর