আন্তর্জাতিক

রিকশাচালক থেকে ধর্মগুরু ধর্ষক আসারাম, ১২ দেশে ৪২৫ আশ্রম

ভারতে একের পর এক ধর্মগুরু যৌন কেলেঙ্কারিতে ফাঁসছেন এবং বিচারে দোষী প্রমাণিত হয়ে তাদের সাজাও হচ্ছে। তারপরও বিশ্বাস টলছে না ভক্তদের। যার সর্বশেষ উদাহরণ স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপু। ছিলেন চাওয়ালা, রিকশাচালক। সেখান থেকে আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে চমকপ্রদ উত্থান।

Advertisement

গুজরাটের সবরমতী নদীর ধারে একটি সাদাসিধে আশ্রম থেকে শুরু করে এখন এক বিশাল সাম্রাজ্য তার। চার দশকে বিশ্বের ১২টি দেশে ৪২৫টি আশ্রম গড়েছেন। ভারতে ৫০টিরও বেশি ‘গুরুকূল’ বা আবাসিক স্কুল চালায় আসারামের আশ্রম। তারই একটিতে বছর দশেক আগে দুই নাবালক ছাত্রের মৃতদেহ পাওয়ার পর প্রথম শোরগোল হয়।

নিহত দুই ছাত্র, যারা দুই ভাই ছিল, তারা আসারাম বাপুর কালো জাদু চর্চার বলি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তাদের বাবা-মা। সেযাত্রায় বেঁচে গেলেও নাবালিকা ধর্ষণের মামলায় আর শেষরক্ষা হলো না। আসারাম এবং তার সুপুত্র, দু’জনেই গ্রেফতার হয়ে জেলে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত বিচারে আসারাম দোষীও প্রমাণিত হলেন। তাকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা।

আরও পড়ুন : ধর্ষণ ধর্মগুরুদের জন্য পাপ নয়, বিশ্বাস আসারামের

Advertisement

কিন্তু এই ধর্ষণ মামলার তদন্তের সূত্রে আশ্রমের ভেতরে বাবাজির যে কাণ্ডকারখানার নমুনা খুঁজে পাওয়া গেল, তা এককথায় ভয়াবহ। বেপরোয়া যৌন ব্যাভিচার আর নিপীড়নের অজস্র উদাহরণ। এবং আদৌ ধর্মীয় সংগঠন নয়, বরং পুরোদস্তুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আশ্রমের কাজকর্ম চালিয়ে ৪০ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন এই আসারাম বাপু।

এর সঙ্গে আছে হাজার হাজার একর জমি, যার কিছু অংশ অবৈধ উপায়ে আত্মসাৎ করা। আসারামের কুকীর্তি অবধারিতভাবেই মনে পড়িয়ে দিচ্ছে আরেক স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত সিং রাম রহিমের কথা, যার ডেরা ছিল যৌন অনাচারের আখড়া। কিন্তু তারও শেষরক্ষা হয়নি। তিনিও এক ধর্ষণের মামলায় দোষী প্রমাণিত হয়ে সম্প্রতি জেলে গেছেন।

আরও পড়ুন : ১০ হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্য ধর্ষক ধর্মগুরু আসারামের

এরপর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই ধর্মগুরুদের কি আর বিশ্বাস করতে পারবেন ভক্তরা? উত্তর খুঁজতে গিয়ে অবাক হতে হলো। পেশাদার জীবনে অত্যন্ত সফল বিপণন বিশেষজ্ঞ ত্বমেকা রায়চৌধুরি ব্যক্তিজীবনে খুবই ধর্মবিশ্বাসী এবং তাদের একজন পারিবারিক গুরুদেবও রয়েছেন।

Advertisement

তিনি জানান, ধর্ম বিশ্বাস যেহেতু নেহাত অন্তরের ব্যাপার এবং তিনি জন্ম থেকেই ওই গুরুদেবের কাছে যাচ্ছেন, তার বিশ্বাস টলেনি। কিন্তু এটাও ঠিক যে কয়েকজন ধর্মগুরুর কুকীর্তির জন্য সবার সম্পর্কেই প্রশ্ন উঠে আসছে। যেমন একটি ঘটনার কথা জানালেন ত্বমেকা, যে তাদের গুরুদেব একবার ভক্তদের ডাকে প্যারিস যেতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু ভিসার দরখাস্ত করতে গিয়ে জানতে পারেন, কোনো ধর্মগুরুকে ইউরোপে যাওয়ার শেঙেন ভিসা দেয়া হয় না। সমস্ত ধর্মের গুরুদের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। কারণ তথাকথিত ধর্মগুরুরা যা বলেন, যা করেন, তার সঙ্গে আধুনিক ইউরোপীয় মনন আদৌ খাপ খায় না। ফলে গুরুরা স্বাগত নন ফ্রান্সে।

কিন্তু প্রশ্ন যদি তৈরি হয়, সন্দেহ যদি দানা বাঁধে মনের মধ্যে, তা হলেও কি গুরুর প্রতি ভক্তি অটল থাকে?

আরও পড়ুন : ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ভারতের আরও এক ধর্মগুরু

পেশায় অর্থনীতিবিদ অশেষ সেনগুপ্ত বলেন, তিনি এখনও তেমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়েননি, এমন কোনো অসুবিধা তার এখনও হয়নি যে, একজন গুরুর দরকার হতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি হয়, তা হলে একজন গুরুর কাছে তিনি নিজেকে সমর্পণ করতেই পারেন। অশেষকে প্রশ্ন করা হয়, যারা গুরুবাদে বিশ্বাসী, তাদের অনেকেই বেশ অর্থবান, বা ক্ষমতাশালী। তাদের কিসের অসুবিধা?

অশেষের বক্তব্য, তিনি শুধু আর্থিক অসুবিধার কথাই বলতে চাননি। আরও অনেক সংকট আছে, যার থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষ গুরুর শরণাপন্ন হয়।

সম্ভবত এই কথার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মূল সমস্যা। মানুষের যতদিন সেই আত্মিক সংকটের জায়গাটা থাকবে, কোনো আসারাম বাপু, বা গুরমিত সিং রাম রহিমের কেচ্ছা আঁচড় কাটতে পারবে না অখণ্ড গুরুভক্তিতে।

সূত্র : ডি ডব্লিউ।

এসআইএস/জেআইএম