ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলন উপলক্ষে বিলাসবহুল ৩০টি বিএমডব্লিউ সিডান সেভেন সিরিজের গাড়ি আমদানি করেছে সরকার। বিদেশি অতিথিদের ব্যবহার ছাড়াও সম্মেলনের দায়িত্বরতরা এসব গাড়ি ব্যবহার করবেন। সরকারি যানবাহন অধিদফতরের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত এসব গাড়ির প্রতিটির মূল্য পড়েছে ৬২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে বিলাসবহুল এসব গাড়ির জন্য সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেয়া একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন >> মন্ত্রীদের জন্য ৩৬ কোটি টাকার ৫০ গাড়ি ক্রয়
জাতীয় সংসদ ভবনে গত রোববার অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, এর আগে কমিটি অধিদফতরের গাড়ি কেনা-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ জানতে চেয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এসব তথ্য উপস্থাপন করে অধিদফতর। বৈঠকের কার্যপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রতিটি গাড়ির ক্রয়মূল্য শুল্কমুক্তভাবে ৮০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ধার্য করে দেয়। কিন্তু অধিদফতর উন্মুক্ত দরপত্র, তাদের ভাষায় ‘সফল আলাপ-আলোচনার’ মাধ্যমে প্রতিটি গাড়ি ৬২ লাখ ১৮ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে। গাড়িপ্রতি ১৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা কম খরচ হয়েছে। ফলে সরকারের সাশ্রয় হয়েছে পাঁচ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, সম্মেলন শেষে এসব গাড়ি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া হবে। ভবিষ্যতে আমন্ত্রিত অতি গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের জন্য সেসব গাড়ি ব্যবহার করা হবে। এ ধরনের কেনা গাড়ি অতীতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীদের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী মাসের ৫ ও ৬ তারিখ মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।
Advertisement
ওই সম্মেলন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসব গাড়ি কেনার জন্য এর আগে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর এসব গাড়ি কেনা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে ওআইসি। সেখান থেকে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান আরও দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করবেন এবং সেখান থেকেও একটি রেজ্যুলেশন পাশ হতে পারে।
মেরামত নয় নতুন গাড়ি কেনার পক্ষে যানবাহন অধিদফতর
কার্যপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, অধিদফতর কর্তৃক গাড়িগুলো সার্বক্ষণিক প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন। জনবল থাকলে সঙ্গে ড্রাইভারও পদায়ন করা হয়। ওই সমস্ত গাড়ি নিয়মিত সার্ভিসিং এবং প্রয়োজনীয় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে খুচর যন্ত্রাংশ সরবরাহ, সংযোজন ও মেরামত কাজও সরকারি কারখানায় করা হয়।
আরও পড়ুন >> ঢাকায় ওআইসির সম্মেলন, কেনা হচ্ছে ৩০ মার্সিডিজ গাড়ি
Advertisement
সরকারি আদেশ অনুযায়ী, এসব গাড়ির মেয়াদ আট বছর পার হলে নিলামের মাধ্যমে বেচার ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু এখন অনেকের পদোন্নাতি হওয়ায় কর্মকর্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কম। তাই নিলামে বেচা যাচ্ছে না। কখনও কখনও ১৫ থেকে ২০ বছর গাড়িগুলো ব্যবহার করা হয়। তাতে মেরামত ব্যয় বেড়ে যায়। তাই অধিদফতর আট বছর পর গাড়িগুলো বিক্রি করে টাকাগুলো রাজস্ব খাতে জমা নিয়ে নতুন গাড়ি কেনার পক্ষে মত দেয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমতি নিয়ে ট্যাক্স-ফ্রি গাড়ি আমদানি করলে বর্তমান আইন অনুযায়ী গাড়িগুলো নিলামে কিনে ব্যবহার করতে পারেন না সাধারণ মানুষ। তাদের রেজিস্ট্রেশন দেয়া যায় না। এ ধরনের আইন পরিবর্তনেরও সুপারিশ করেছে অধিদফতর।
এইচএস/এমএআর/আরআিইপি