জাতীয়

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট : সম্ভাবনার মহাকাশ

বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট’ আগামী ৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের সময় বিকেল পাঁচটায় মহাকাশের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে এখন সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ মে।

Advertisement

এর মাধ্যমে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এই স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে অন্য দেশের ওপর যেমন বাংলাদেশের নির্ভরতা কমবে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার বাংলাদেশ টেলিকম নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সম্মেলন কক্ষে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট : সম্ভাবনার মহাকাশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ বিষয়ে নানাদিক তুলে ধরা হয়।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেজবাহউজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট এবং টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্কের সদস্যরা।

Advertisement

'বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট : সম্ভাবনার মহাকাশ' শীর্ষক আলোচনা সভায় স্যাটেলাইট মহাকাশের উদ্দেশে উৎক্ষেপণের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

উল্লেখ্য ২০১৩ সালে রুশ কোম্পানি স্পুটনিকের কাছ থেকে ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমার বর্তমান স্লটটি কেনে বিটিআরসি। ১৫ বছরের জন্য এই স্লট পাওয়ার জন্য গুণতে হয়েছে ২৮ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ বারবার আইটিইউর কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে থাকলেও নিজস্ব আরবিটাল স্লট আনতে পারেনি।

মহাকাশের পথে স্বপ্ন যাত্রা : স্পারসো বহু বছর থেকেই বাংলাদেশে স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করছে। ২০০৭ সালে অরবিটাল স্লটের জন্য আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নে বিটিআরসির অবদান। বাংলাদেশের আবেদনের ওপর অন্তত ২০ টি দেশের আপত্তি।

সরকারের অনুমোদন : ২০১৫ সালের মার্চে একনেকে ২,৯৬৭.৯৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। যার মধ্যে সরকারি অর্থ ১,৩১৫.৫১ কোটি টাকা এবং বিদেশি অর্থায়ন ধরা হয় ১,৬৫২.৪৪ টাকা। বিটিআরসি কৃতিত্বের দাবি আনতে পারে যে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি ২,৭৬৫ কোটি টাকায় শেষ হচ্ছে।

Advertisement

ইতিহাসের অংশ থ্যালাস : দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজ পায় ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস। ২০১৫ সালের নভেম্বরে তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ডিজাইন এবং নির্মাণের চুক্তি হয়। চুক্তিটি ছিল ১,৯৫১.৭৫ কোটি টাকার।

ব্যবসায়িক পরিকল্পনা : স্যাটেলাইটটির ক্ষমতার অর্ধেক দেশের বাজারে ব্যবহার হবার পর বাকিটা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে সাত বছরের মধ্যে খরচ উঠে আসবে। তবে এখনও সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক পরিকল্পনার বিষয়টি জানা যায়নি।

দিগন্ত প্রসারিত কভারেজ : স্যাটেলাইটটির কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজাকিস্তান পর্যন্ত। বাংলাদেশের অবস্থান ৯০ ডিগ্রিতে হলেও বঙ্গবন্ধু-১ এর অবস্থান হচ্ছে আমাদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে। দুটি ল্যান্ডিং স্টেশন হয়েছে গাজীপুর এবং রাঙ্গামাটিতে।

উৎক্ষেপণের মাহেন্দ্রক্ষণ : গত ৩০ মার্চ বঙ্গবন্ধু-১ ফ্লোরিডা লঞ্চিং প্যাডে পৌঁছেছে। প্রাথমিকভাবে এর সম্ভাব্য উৎক্ষেপণ ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর, নির্ধারণ করা হয়। পরে চলতি বছরের ৩০ মার্চসহ আরও নানা তারিখ বলা হয়। তারপর আগামী ৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের সময় বিকেল পাঁচটায় স্যাটেলাইটটিকে মহাকাশের উৎক্ষেপ করার কথা বলা হলেও এখন তা পরিবর্তন হয়ে ৭ মে সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে।

সেবার পরিসর : ডিজিটাল ডিভাইড দূর করতে সবচেয়ে অধিকতর কার্যকারী হবে স্যাটেলাইটি। বর্তমানে আমাদের দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অন্যদেশের স্যাটেলাইট থেকে যে কানেকটিভিটি কিনে ব্যবহার করছে। সেখানে এই স্যাটেলাইটটি সাশ্রয়ী হবে। দুর্গম অঞ্চলে সাশ্রয়ী কানেক্টিভিটি নিশ্চিতমহ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বাধিক ভূমিকা রাখবে। ডিটিইএচ বা বিনোদনের ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে।

ন্যানো স্যাটেলাইট দিয়ে যাত্রা শুরু : ব্র্যাক অন্বেষ ২০১৭ সালের ৪ জুন দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট যে লঞ্চার উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে তারাই ব্র্যাক অন্বেষা উৎক্ষেপণ করে। অন্বেষার গ্রাউন্ড স্টেশন মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই।

মর্যাদার আসন : প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, থ্যাইল্যান্ড, শ্রীলংকার নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। এখন বাংলাদেশও মর্যাদার এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। নেপাল-ভুটান ন্যানো স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করছে। অন্যদিকে মিয়ানমারও বাণিজ্যিক স্যাটেলাইটের কাজ শুরু করেছে।

এএস/আরএম/এমএমজেড/পিআর