অর্থনীতি

ব্যাংকের শেয়ার ছাড়ছেন বিদেশিরা

ব্যাংক খাতে চলমান অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। ইসলামী ব্যাংকসহ সাতটি ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অবশ্য চার ব্যাংকে তাদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। মার্চ শেষে বিদেশিদের বিনিয়োগ নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

Advertisement

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকে বিদেশিদের বিনিয়োগ নেই। বাকি ২৫টি ব্যাংকের শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে।

মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর প্রায় ১৪২ কোটি ৭৯ লাখ শেয়ার বিদেশিদের কাছে রয়েছে। এক মাস আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে বিদেশিদের কাছে ব্যাংকের শেয়ার ছিল প্রায় ১৪৬ কোটি ৫০ লাখ। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ব্যাংকের তিন কোটি ৭১ লাখ শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমান বাজার দরে বিদেশিদের ছেড়ে দেয়া শেয়ারের মূল্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা। 

বর্তমান বাজার দরে তালিকাভুক্ত ২৫টি ব্যাংকের শেয়ারে বিদেশিদের প্রায় পাঁচ হাজার ৭২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৭৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

Advertisement

বিদেশিরা যে সাতটি ব্যাংকের শেয়ারের কিছু অংশ ছেড়ে দিয়েছেন এর মধ্যে রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক।

বিদেশিরা সবচেয়ে বেশি ছেড়েছেন ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার। এক মাসের ব্যবধানে তারা ব্যাংকটির এক শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। বিদেশিদের ছেড়ে দেয়া এ শেয়ারের সংখ্যা প্রায় ৪৩ কোটি ১৫ লাখ। মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকের ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার বিদেশিদের কাছে আছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এছাড়া সিটি ব্যাংকের দশমিক ৫৫ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের দশমিক ৩৮ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দশমিক ২১ শতাংশ, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের দশমিক ১৯ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং আইএফআইসি ব্যাংকের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার বিদেশিরা ছেড়ে দিয়েছেন।

অপরদিকে বিনিয়োগ বাড়া চার ব্যাংকের মধ্যে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের দশমিক ৯১ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংকের দশমিক ৪৯ শতাংশ, ডাচ বাংলা ব্যাংকের দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং প্রাইম ব্যাংকের দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার বিদেশিরা নতুন করে কিনেছেন।

Advertisement

বিদেশিদের ব্যাংকের শেয়ার ধারণের চিত্র :

নাম

মার্চে শেয়ার ধারণ (মোট শেয়ারের শতকরা হার)

ফেব্রুয়ারিতে শেয়ার ধারণ (মোট শেয়ারের শতকরা হার)

মার্চে বিদেশিদের কাছে থাকা শেয়ার সংখ্যা

ফেব্রুয়ারিতে বিদেশিদের কাছে থাকা শেয়ার সংখ্যা

এবি ব্যাংক

১.৯৩ শতাংশ

১.৯৩ শতাংশ

১ কোটি ৪৬ লাখ ৩২ হাজার

১ কোটি ৪৬ লাখ ৩২ হাজার

আল-আরাফাহ ব্যাংক

৩.০৮ শতাংশ

৩.০৮ শতাংশ

৩ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার

৩ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার

ব্যাংক এশিয়া

০.৬৫ শতাংশ

০.৬৫ শতাংশ

৬৪ লাখ ১৫ হাজার

৬৪ লাখ ১৫ হাজার

ব্র্যাক ব্যাংক

৪০.৮১ শতাংশ

৪০.৩২ শতাংশ

৩৫ কোটি ১ লাখ ৪৯ হাজার

৩৪ কোটি ৫৯ লাখ ৪৫ হাজার

সিটি ব্যাংক

১২.১৬ শতাংশ

১২.৭১ শতাংশ

১১ কোটি ২১ লাখ ২ হাজার

১১ কোটি ৭১ লাখ ৭২ হাজার

ঢাকা ব্যাংক

০.১৩ শতাংশ

০.১৩ শতাংশ

৯ লাখ ৩৯ হাজার

৯ লাখ ৩৯ হাজার

ডাচ বাংলা

০.১৬ শতাংশ

০.১৩ শতাংশ

৩ লাখ ২০ হাজার

২ লাখ ৬০ হাজার

ইবিএল

০.৫১ শতাংশ

০.৫১ শতাংশ

৩৭ লাখ ৬৩ হাজার

৩৭ লাখ ৬৩ হাজার

এক্সিম

৪.৩০ শতাংশ

৪.৩০ শতাংশ

৬ কোটি ৭ লাখ ২৬ হাজার

৬ কোটি ৭ লাখ ২৬ হাজার

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

৪.৯৬ শতাংশ

৪.৯৬ শতাংশ

৩ কোটি ৫৩ লাখ ৫৫ হাজার

৩ কোটি ৫৩ লাখ ৫৫ হাজার

আইএফআইসি

১.৯২ শতাংশ

১.৯৩ শতাংশ

২ কোটি ২৯ লাখ ৪৯ হাজার

২ কোটি ৩০ লাখ ৬৯ হাজার

ইসলামী ব্যাংক

২৬.৩৭ শতাংশ

২৭.৩৭ শতাংশ

৪২ কোটি ৪৫ লাখ ৫৪ হাজার

৪৪ কোটি ৬ লাখ ৫৪ হাজার

মার্কেন্টাইল

৭.২৪ শতাংশ

৭.৪৫ শতাংশ

৫ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার

৫ কোটি ৭৮ লাখ ২০ হাজার

এনবিএল

৩.১৬ শতাংশ

৩.৫৪ শতাংশ

৭ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার

৮ কোটি ৩৯ লাখ ১৪ হাজার

এনসিসি

১.৪০ শতাংশ

১.৪০ শতাংশ

১ কোটি ২৩ লাখ ৬৫ হাজার

১ কোটি ২৩ লাখ ৬৫ হাজার

ওয়ান ব্যাংক

৬.৭৯ শতাংশ

৬.৮৪ শতাংশ

৪ কোটি ৯৫ লাখ ৬৯ হাজার

৪ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার

প্রাইম ব্যাংক

৩.৭৯ শতাংশ

৩.৭৪ শতাংশ

৩ কোট ৯ লাখ ১২ হাজার

৩ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার

পূবালী ব্যাংক

১.৫৩ শতাংশ

১.৫৩ শতাংশ

১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার

১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক

০.২৩ শতাংশ

০.২৩ শতাংশ

১৭ লাখ ৭৪ হাজার

১৭ লাখ ৭৪ হাজার

এসআইবিএল

১.৩৯ শতাংশ

০.৪৮ শতাংশ

১ কোটি ২ লাখ ৬২ হাজার

৩৫ লাখ ৪৩ হাজার

সাউথ ইস্ট ব্যাংক

৬.৮১ শতাংশ

৭.০০ শতাংশ

৬ কোটি ২৪ লাখ ৪৪ হাজার

৬ কোটি ৪১ লাখ ৮৬ হাজার

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক

২.৪৫ শতাংশ

২.৪৫ শতাংশ

১ কোটি ৯৩ লাখ ৯৯ হাজার

১ কোটি ৯৩ লাখ ৯৯ হাজার

ট্রাস্ট ব্যাংক

১.৮৩ শতাংশ

-

১ কোটি ১ লাখ ৯২ হাজার

১ কোটি ১ লাখ ৯২ হাজার

ইউসিবি

১.৯৩ শতাংশ

১.৯৩ শতাংশ

২ কোটি ৩ লাখ ৪৪ হাজার

২ কোটি ৩ লাখ ৪৪ হাজার

উত্তরা ব্যাংক

২.২২ শতাংশ

২.২২ শতাংশ

৮৮ লাখ ৮১ হাজার

৮৮ লাখ ৮১ হাজার

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদেশিদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারে। ব্যাংকটিতে বিদেশিদের প্রায় তিন হাজার ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশিদের প্রায় এক হাজার ১৩৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোতে বিদেশিদের যে বিনিয়োগ আছে তার ৭৫ শতাংশই আছে ওই দুটি ব্যাংকে।

বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিদেশিদের ১০০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ আছে চারটিতে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংকে প্রায় ৪১৯ কোটি, সাউথ ইস্ট ব্যাংকে ১১৪ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১০৯ কোটি এবং ওয়ান ব্যাংকে ১০৫ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে।

৫০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকে ৮৯ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৮৭ কোটি, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ৮৬ কোটি এবং প্রাইম ব্যাংকে ৮৩ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে।

এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৪৫ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংকে ৪১ কোটি, ইউসিবিতে ৩৭ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকে ৩৬ কোটি, পূবালী ব্যাংকে ৩৩ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ২৫ কোটি, উত্তরা ব্যাংকে ২৪ কোটি, এবি ব্যাংকে ২৪ কোটি, এনসিসি ব্যাংকে ২০ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ২০ কোটি, ইস্টার্ণ ব্যাংকে ১৫ কোটি, ব্যাংক এশিয়ায় ১৩ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে পাঁচ কোটি, ডাচ বাংলা ব্যাংকে চার কোটি এবং ঢাকা ব্যাংকে দুই কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ আছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অযৌক্তিকভাবে সরকারের নির্দেশনায় ব্যাংকের সিআরআর কমানো হয়েছে। এটি আর্থিক খাতের জন্য খুব একটা ভালো লক্ষণ নয়। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি ব্যাংকের কিছু শেয়ার বিদেশিরা ছেড়ে দিয়েছেন। সুতরাং বিদেশিরা ব্যাংকের খুব বড় অংকের শেয়ার ছাড়েননি। এ নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের আগে ওই কোম্পানির সার্বিক তথ্য যাচাই-বাছাই করেন। বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। ব্যাংক খাতের অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রায় সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এর অর্থ হলো আমাদের ব্যাংকিং খাত খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। এ কারণেই হয়-তো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিছু কিছু ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন।

এমএএস/এমএআর/পিআর