বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার কৌশলে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অর্থ পাচার। এই অর্থ পাচারের বড় অংশ হচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে। আমদানি রফতানিতে পণ্য ও সেবায় ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং; আমদানি-রফতানিতে বহুমাত্রিক ইনভয়েসিং; পণ্য ও সেবা সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা। একইভাবে শিপমেন্টের ক্ষেত্রেও ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে।
Advertisement
এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অর্থায়নে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের আধিপত্য বেশি। ২০১১ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি হয় ৭১ শতাংশ। সেই সময় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছিল ১৮ শতাংশ। অবশিষ্ট বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ২০১৭ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ শতাংশে।
মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসে ‘ট্রেড সার্ভিসেস অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। কর্মশালায় বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপার নিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক মূল্যায়ন এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অধিদফতরের কমিশনার ড. মঈনুল খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির, এইচএসবিসি ব্যাংকের গ্লোবাল ট্রেড অ্যান্ড রিসিভেবলস ফাইন্যান্সের কান্ট্রি হেড মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান প্রমুখ।
Advertisement
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (ট্রেনিং) ড. শাহ মো. আহসান হাবীবের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব পণ্য আমদানিতে কম শুল্ক দিতে হয়, বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রাংশ, শিল্পের কাঁচামাল এবং খুচরা যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে বেশি মূল্য দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়। আবার সরকারি প্রণোদনা পেতে রফতানি পণ্যে বেশি মূল্য দেখানো হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের পাওনা পরিশোধে অসামঞ্জস্যতা প্রমাণ করছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং শুল্ক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম অর্থ পাচার প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বিআইবিএমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে ইউএন কনভেনশন গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া অর্থ পাচার ঠেকাতে এলসি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোরারোপ করা হয়।
কর্মশালার উদ্বোধন করে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ট্রেড সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকটি দেশে ট্রেড সার্ভিসের ক্ষেত্রে আলাদা রেগুলেশন রয়েছে। এক্ষেত্রে আমরাও নতুন গাইডলাইন করতে যাচ্ছি।
Advertisement
তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যবসাভিত্তিক অর্থপাচার বাড়ছে। তবে অর্থপাচার প্রতিরোধে কাজ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফইউ)। গত বছর থেকে ব্যাংকের সব কর্মকর্তাদের মানি লন্ডারিং বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে।
ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, অর্থ পাচার বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেও অর্থ পাচার ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশকেও অর্থ পাচারের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে অর্থ পাচার কমিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, টাকা পাচার ঠেকাতে আইন-কানুন এবং বিধির কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু অভাব শুধুই সততা। এ কারণে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ড. মঈনুল খান বলেন, অর্থ পাচারের ৮০ শতাংশই ট্রেডের মাধ্যমে হচ্ছে। বর্তমানে এটা প্রতিরোধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচার বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এমইউএইচ/এসআই/বিএ