* ড্রাইভার বলছিল,‘মেয়েটিকে নামতে দিস না’* কন্ডাকটর আমার স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করে* হেলপার পাশের মহিলা সিটে আমার প্রায় গাঁ ঘেঁষে বসে
Advertisement
বাসের কন্ডাকটরের (পথপ্রদর্শক) কথা-বার্তা শুনে আমার মনে হয়েছে যে, সে নেশাগ্রস্ত। হেলপার (সহকারী) খুব নোংরা কথা বলছিল। সে বারবার বলছিল ‘আজকের জন্য এই রকম একটি মেয়ে দরকার’।
মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবীর আদালতে জবানবন্দি দেন বাড্ডায় তুরাগ পরিবহনে শ্লীলতাহানির শিকার হওয়া উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রী (২২)। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধন/২০০৩) এর ২২ ধারায় আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে তিনি এসব কথা বলেন।
জবানবিন্দতে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, শনিবার দুপুর ১টায় বাড্ডা লিংকরোড থেকে উত্তরা ৬নং সেক্টেরে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠি। বাসে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী ছিল। নতুন বাজারে আসতেই বাসটির সবযাত্রী নেমে যায়। আমি বাসের সামনে মহিলা সিটে একা বসে ছিলাম কিন্তু কন্ডাকটর (মনির) আমাকে বারবার বাসের পেছনের সিটে বসতে বলছিল। কিছুক্ষণ পর বাসের হেলপার (নয়ন) আমার পাশের মহিলা সিটে আমার প্রায় গাঁ ঘেঁষে বসে। হেলপার খুব নোংরা কথা বলছিল। বাসের হেলপার এমন ভঙ্গিতে বসেছিল যেনো আমি সিট থেকে নামতে না পারি। বাসের সবযাত্রী নেমে যাওয়ায় আমি বাস থেকে নামতে চাচ্ছিলাম কিন্তু বাসের হেলপার ও কন্ডাকটর আমাকে নামতে দিচ্ছিল না। কন্ডাকটর বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল।
Advertisement
বাসটি যখন নর্দা ক্রস করছিল তখন হঠাৎ করে হেলপার আমার হাত ধরে। ড্রাইভার বলছিল যে,‘মেয়েটিকে নামতে দিস না।’ কন্ডাকটর বলছিল,‘তাড়াতাড়ি বাসটি চালিয়ে বিশ্বরোড নিয়ে যা।’ হেলপার আমার হাত ধরলে আমি তার হাতে আঘাত করি, তখন সে আমার হাত ছেড়ে দেয়। এরপর কন্ডাকটর আমার স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করে। আমার হাতের ব্যাগ দিয়ে তা প্রতিহত করি। কিন্তু কন্ডাকটর আমার দুই হাতে ও পিঠে হাত দিতে থাকে। ততক্ষণে বাসটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় চলে আসে। সেখানে জ্যাম থাকায় চালক বাসটি চালিয়ে বিশ্বরোডে নিতে পারে নাই। হেলপার দরজার কাছে যায়, যাতে আমি নামতে না পারি। তখন আমি চেঁচামেচি করবো এই ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক বাস থেকে নেমে যাই। পেছন থেকে শুধু এই কথাটি শুনতে পাই, ‘মেয়েটাকে ধরতে পারলি না।’ বাস থেকে নামার পর আমি কাঁপতে কাঁপতে সুপ্রভাত নামের অপর একটি বাসে উঠে উত্তরায় আমার ক্যাম্পাসে যাই। সেখানে আমি আমার স্বামী ও বন্ধুদের বিষয়টা বলি।
পড়ালেখা না করায় এ অবস্থা
রিমান্ড শুনানির সময় ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবী বাসচালক, হেলপার ও কন্ডাকটরকে প্রশ্ন করেন, তোমরা কতদূর পড়ালেখা করেছো।
উত্তরে চালক বলেন, স্যার পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। অপরদিকে কন্ডাকটর মনির ও হেলপার নয়ন বলেন, আমরা কোনো পড়ালেখা করিনি। তখন বিচারক বললেন, পড়ালেখা না করায় এই অবস্থা।
Advertisement
চালক-সহকারী-কন্ডাকটরের তিন দিনের রিমান্ড
বেসরকারি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার তুরাগ পরিবহনের বাসটির চালক, সহকারী ও কন্ডাকটর প্রত্যেককে তিনদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকা মহানরগ হাকিম গোলাম নবী।
১৭ মে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
এই ঘটনায় দায়ের করা মামলাটির এজাহার গ্রহণ করেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবী মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৭ মে দিন ধার্য করেছেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে উত্তরা ৬ নং সেক্টরে উত্তরা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আসার জন্য উত্তরবাড্ডা এলাকা থেকে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। বাসে যাত্রী ছিল মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন। এ সময় নাটকীয়ভাবে পরবর্তী স্টপেজগুলোতে বাস সামনে যাবে না বলে যাত্রীদের নামাতে থাকে বাসের সহকারী এবং নতুন কোনো যাত্রী ওঠানো বন্ধ রাখে।
ওই ছাত্রী আশঙ্কা ও সন্দেহবশত বাস থেকে নামার চেষ্টা করলে বাসের হেলপার দরজা বন্ধ করে দেয়। কন্ডাকটর তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। বাসের কন্ডাকটর ও হেলপারের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপর অন্য বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে কর্তৃপক্ষ ও সহপাঠীদের বিষয়টি জানান।
পরবর্তীতে সহপাঠীরা ওই বাসটি আটক ও হেলপার-কন্ডাকটরকে গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় মানববন্ধন করেন। বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা তুরাগ পরিবহনের অর্ধশত বাস আটকে চাবি নিয়ে নেন।
ওই ঘটনায় গত রোববার ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্বামী জহুরুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০/৩০ ধারায় ওই মামলা দায়ের করেন। মামলায় তুরাগ পরিবহনের ওই বাসের অজ্ঞাত চালক, হেলপারসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলা নং ২৬।
জেএ/জেডএ/পিআর