রাহুল দ্রাবিড়, কুমার সাঙ্গাকারা, এবিডি ভিলিয়ার্স। এই তিনজনের প্রথমজন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট থেকে সরে গেছেন। দ্বিতীয়জন যাই যাই। আর তৃতীয়জন এই মুর্হুতে ব্যাট হাতে দাপট দেখাচ্ছেন। এই তিনজনের সঙ্গে একটা বিষয়ে ব্র্যাকেট বন্দী হতে পারে আরেকটা নাম- মুশফিকুর রহিম। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে উইকেট কিপিং করেছেন এঁরা সবাই। আবার কিপিং গ্লাভস খুলে রেখে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই তাঁরা ক্রিকেট বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। দ্রাবিড়-সাঙ্গাকারা-ডিভিলিয়ার্স এই ত্রয়ীকে অনেক বড় ব্যাটসম্যান হিসেবেই মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। আর উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান থেকে শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে যাত্রা শুরু হলো মুশফিকুর রহিমের। তবে মুশফিকের এই নতুন যাত্রাপথ কতোটা মসৃণ হবে তা নিয়ে সংশয় থাকছে। আর এই সংশয়ের উৎসভূমি মূলত বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি। এখানে কাউকে দল থেকে ছুঁড়ে ফেলতে বেশিক্ষণ লাগে না। রাহুল দ্রাবিড় প্রায় নিজের অনিচ্ছায় ভারতের হয়ে ওয়ানডেতে কিপিং করেছেন দলের ব্যাটিং শক্তি বাড়াতে। ভারসাম্য ঠিক রাখতে। অনেকটা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির ইচ্ছায়-ই কিপিং করেছেন রাহুল। কুমার সাঙ্গাকারা ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে কিপিং ছেড়ে শুধু বাটসম্যান হিসেবে টেস্ট খেলছেন। আর এবি ডিভিলিয়ার্স কিপিং গ্লাভস ফেলে এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে ক্রিকেটেতো সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান এবিডি। মুশফিকুর রহিম নিজের ইচ্ছায় কিপিং করা থেকে সরে গেলেন নাকি লিটন দাসকে জায়গা করে দিতে তাঁকে উইকেটের পেছন থেকে সরিয়ে দেয়া হলো সেটা খুব পরিষ্কার নয়। বরং বলা যায় খানিকটা ধোয়াশাচ্ছন্ন। তবে গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে লিটন খারাপ করেননি। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে কিপিং এর পাশাপাশি তাঁর ব্যাটিংও নজর কেড়েছে অনেকের। খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পঞ্চাশ রানের একটা ইনিংস খেলেছেন। যা মূলত বাংলাদেশকে লিড নিতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে গোটা তিনেক ক্যাচ। অর্থাৎ, কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার কাজটা কিন্তু শুরু করেছেন তিনি। কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটনের প্রতিষ্ঠা মানে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে জায়গা করে নিতে হবে মুশফিককে। টেস্টে এই মুহুর্তে তিনি-ই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। কিপিং এর দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে অধিনায়কত্বে আরো বেশি মনোনিবেশ করতে পারবেন সেটা মাথায় রেখে। তবে সব কিছু মিলিয়ে মুশফিক নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে। আর এই মুর্হুতে মুশফিক যে খানিকটা খারাপ সময় পার করছেন সেটাও স্বীকার করতে হবে। চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে বড় রান আসেনি। করেছেন ২৮ রান। অবশ্য একটা দুটো ইনিংস দিয়ে মুশফিককে মাপা ঠিক হবে না। ভুলে গেলে ভুল হবে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির মালিকের নামও মুশফিকুর রহিম। বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা তাঁর আছে। টেস্ট পরিসংখ্যানেও তার প্রতিফলন। এ পর্যন্ত ৪৭ টেস্টে ৩১ দশমিক ৯১ গড়ে রান করেছেন ২৫৮৫। সেঞ্চুরি ৩টা। তবে শুধু ব্যাটসম্যান মুশফিকের কাছ থেকে দল চাইবে আরো দায়িত্বশীল ব্যাটিং। উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান মুশফিকের ঘাড়ের কাছে লিটন দাস সত্যিই গরম নিঃশ্বাস ফেলছেন। আর টেস্ট দলে ড্রিংকস টানার দায়িত্বে আছেন সৌম্য সরকারের মতো ব্যাটসম্যান। অতএব একটা, দুটো, তিনটা চারটা ইনিংসে বড় স্কোর না পেলেই কিন্তু ‘চলে না’ আওয়াজ উঠে যাবে! তখন তাঁর অভিজ্ঞতাকেও মূল্যায়ন করা হবে বলে মনে হয় না। গ্লাভস হাত ছাড়া হওয়ার পর অধিনায়কত্বও হাত ছাড়া হতে সময় লাগবে না। আর বাংলাদেশতো সেই দেশ যেখানে অধিনায়কের গলার আওয়াজটা নিচু থাকলে ‘ভাল অধিনায়ক’। তবে মুশফিকতো আবার সেই সরণির বাসিন্দা নন। অধিনায়কের চাহিদাটাও তাঁর কাছে বাড়তি গুরুত্ব পায়। আর সেই গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় উপেক্ষিতও হয়েছেন তিনি। তবে এবার ব্যাট হাতে ভাল না করলে দলেই উপেক্ষিত থেকে যেতে পারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাছাড়া দলে এখন নতুন রক্ত সঞ্চালনের দিকে মনোযোগী সবাই। আর নতুনরা দলে এসে পারফর্ম করছেন। মুস্তাফিজ-সৌম্য সরকার-জুবায়েররা দলে নতুন রক্তের চিন্তাকে আরো যৌক্তিক করে তুলছেন পারফরম্যান্স দিয়ে। সেই চিন্তায় সবশেষ সংযোজন উইকেটের পেছনে লিটন দাস। সুতরাং কিপিং গ্লাভস হারানো ব্যাটসম্যান মুশফিককে অধিনায়ক মুশফিক ততোক্ষণই সুরক্ষা দিতে পারবেন যতোক্ষণ তাঁর ব্যাটে রান থাকবে। কথাটা সবার থেকে ভাল জানা লোকটার নামও মুশফিকুর রহিম।লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘ইনজুরি টাইম’ ‘এক্সট্রা টাইম’ ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। তিনি কাজ করেছেন দেশের নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে, টেলিভিশন এবং দেশি-বিদেশি রেডিওতে। এইচআর/এমএস
Advertisement