স্বাস্থ্য

'ম্যালেরিয়া নির্মূলে প্রস্তুত আমরা'

বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে ম্যালেরিয়া। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি জেলা এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। দেশের প্রায় পৌনে ২ কোটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এই ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় বসবাস করে।

Advertisement

বাংলাদেশে মূলত ফ্যালসিপেরাম ও ভাইভেক্স নামে দুই ধরণের ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে। গত বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৮৫ শতাংশই ছিল ফ্যাকসিপেরাম জীবাণু বাহিত রোগে আক্রান্ত। যা পরবর্তীতে মারাত্মক ম্যালেরিয়া রোগ এবং এতে মৃত্যুর জন্য মূলত দায়ী।

২৫ এপ্রিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ম্যালেরিয়া নির্মূলে প্রস্তুত আমরা’। আজ (মঙ্গলবার) এ উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

ব্র্যাকের সহযোগিতায় জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

Advertisement

আলোচকরা ম্যালেরিয়া ও ম্যালেরিয়ার লক্ষণ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, এটি স্ত্রী এনোফিলিস মশাবাহিত একটি সংক্রামক রোগ যা প্লাজমোডিয়াম প্রজাতির একপ্রকার পরজীবী (জীবাণু) দ্বারা সংঘটিত হয়। ম্যালেরিয়া রোগে সাধারণত জ্বর হয়। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় কারো জ্বর হলে এবং অন্য কোনো লক্ষণ না থাকলে তাকে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়। জ্বরের সঙ্গে রোগীর অজ্ঞান হওয়া, হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ করা, বার বার খিঁচুনি হওয়া, অত্যাধিক দুর্বলতাসহ একাধিক লক্ষণ থাকলে মারত্মক ম্যালেরিয়া বলে সন্দেহ করা হয়।

তারা বলেন, ম্যালেরিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী বা স্বাস্থ্য সেবিকার কাছে রক্তপরীক্ষা ও কার্যকর চিকিৎসার ওষুধ যা বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তা সেবন করতে হবে।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তারা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৩টি ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলায় প্রতি হাজার জনসংখ্যায় বার্ষিক সংক্রামণ হার (এপিআর) ০.৪৬ এর নিচে নামিয়ে আনা। ১৩টি ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলার মধ্যে ৮টিতে এর সংক্রামণ রোধ করা। অবশিষ্ট ৫১টি জেলায় ম্যালেরিয়ামুক্ত নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণকে নির্মূল কর্মসূচিতে স্থানান্তরবাংলাদেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার কমে যাওয়ায় জাতীয় ম্যালেরিয়া কার্যক্রমের কৌশলগত পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ম্যালেরিয়া প্রবণ ১৩ জেলার মধ্যে ৮টিতে এ রোগে আক্রান্তের হার ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় ২০১২ সাল থেকে প্রাক-নির্মূল ম্যালেরিয়া কার্যক্রম শুরু হয়। যার প্রধান লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে এই ৮ জেলায় ম্যালেরিয়া নির্মূল করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া মুক্ত বাংলাদেশ গড়া। আর এ লক্ষ্যেই জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে নির্মূল কর্মসূচিতে পরিবর্তন করা হয়।

Advertisement

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও লাইন ডাইরেক্টর, কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা, জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডিপিএম ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান, কমিউনিকেবল ডিজিজের পরিচালক ডা. মো. আকরামুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেডিকেল অফিসার ডা. মিয়া সাপাল প্রমুখ।

এএস/এমএমজেড/জেআইএম