জার্মানি, আলজাজিরা থেকে লন্ডন হয়ে কোটা আন্দোলনের মধ্যেই ছিল চূড়ান্ত আভাস। ষড়যন্ত্রের গন্ধটা বেশ দূর থেকে। ষড়যন্ত্রই যেন অভাগা জাতির অমোঘ সঙ্গী। সুযোগ পেলেই ছোবল মারার প্রত্যয় নিয়ে জাল বিস্তার করে যাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারী চক্র। সরকার পতনেই এখন ষড়যন্ত্রকারীদের মূল উদ্দেশ্যে। দেশীয় চক্রের সাথে যোগ দিয়ে জার্মান ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'বেরটেলসম্যান স্টিফটুং' এক ভুয়া জরিপের মাধ্যমে বিশ্বের পাঁচ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় দেখিয়েছে বাংলাদেশকে। হাস্যকর!
Advertisement
সন্দেহটার শুরু কিন্তু এখান থেকেই।
কি অদ্ভুত?? যা হোক! তাদের রিপোর্টটিতে কিন্তু জামায়াত-শিবির আর বিএনপির জ্বালাও পোড়াও এর কোন খতিয়ান লেখা নাই? একই পথে হাঁটছে কুকীর্তির মানদণ্ডে থাকা গণমাধ্যম 'আলজাজিরা'! তারা তো একদলীয় শাসন কায়েমের অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দিয়েছে খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা'র উপরে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আল জাজিরা। তাহলে প্রশ্ন হলো কি উদ্দেশ্যে জার্মানির ভুয়া সমীক্ষা(?) আর আলজাজিরা'র বিতর্কিত রিপোর্ট? কোটা আন্দোলনে সহিংসতা? কারা জড়িত এই সংঘবদ্ধ চক্রে? এটি খুব পরিষ্কার, সরকার পতনের মাস্টারপ্লান।
সামনে জাতীয় নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটালাইজেশন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পদ্মাসেতুর মত অসম্ভবপর স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে সম্প্রতিই দেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নতি হওয়ার পথে। পেয়েছেন দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা। সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, "বাংলাদেশের উন্নয়নে আমি মুগ্ধ, শেখ হাসিনার কাছে বিশ্বের অনেক কিছু শেখার আছে"।
Advertisement
এখানেই তো তাদের গা জ্বালা করার অন্যতম কারণ। তারা ভাবছে এভাবে চললে তো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও শেখ হাসিনার জয় সুনিশ্চিত। তাকে বিতর্কিত করা ছাড়া অন্য কোন উপাই না পেয়ে তাই উঠে পড়ে লেগেছে দেশীয়সহ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চক্রের হোতারা। ৯ বছর আগে যে টার্গেট নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জামায়াত-শিবির বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছিল, সেই টার্গেটকেই সামনে রেখে তারা কোটা আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে নেয়।
তারা আঘাত হানা শুরু করে তাদের পূর্ব পরিকল্পিত এজেন্ডার মাধ্যমে। শিক্ষার জন্য নিবেদিত প্রাণ, শিক্ষা জননী শেখ হাসিনা যেখানে মেধাবী তৈরি করে সেই মেধাবীদের নিয়ে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সেখানে সেই মেধাবী শিক্ষার্থীদেরই উস্কানি দিয়ে কোটা আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াসে নেমেছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
কোটা আন্দোলনকে সরকার পতন আন্দোলনে চূড়ান্ত রূপ দিতেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল মুখোশধারীরা, যা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এজন্য তাদের কাছে খুব প্রয়োজন ছিল লাশের। আন্দোলনের ভেতরে লাশ ফেলানোই ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের মূল উদ্দেশ্য। তারা যেন লাশের গুরুত্ব বুঝে লাশ ফেলতে চাইছিল? এক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রকারীরা সুপরিকল্পিতভাবে বেছে নেয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
তারা ভাল করেই জানে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কোনভাবে লাশ ফেলতে পারলেই সাধারণ মানুষের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে সরকার পতন আন্দোলনকে আরো বেগবান করা যাবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তারা বিনা কারণে পুলিশকে ক্ষিপ্ত করে তোলে এবং হামলা চালায়। তাদের সুপরিকল্পিত ধারণা ছিল হামলা চালালেই পুলিশ মিছিলে গুলি করবে অথবা আ্যকশনে যাবে। এই ফাঁকেই তারা পুলিশের গুলিতে ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব রটিয়ে দেবে। যাতে আন্দোলন চূড়ান্ত উদ্দেশ্যের দিকে যায়।
Advertisement
হামলাকারীরা কতটা চৌকস ছিল তা তাদের গতিবিধিই বলে দেয়? হামলা করার সময় মুখগুলো ছিল কাপড় দিয়ে বাঁধা। তারা কতটা প্রশিক্ষিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না? কোটা আন্দোলনের নাশকতা একেবারেই পূর্ব পরিকল্পিত। তারা কতটা সুপরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছিল তা নিখুঁতভাবে খেয়াল করার বিষয়? যার নামে মৃত্যুর সংবাদ রটানো হয়েছিল সেই ছাত্রটি নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বেঁচে আছে বলে জানান দিলেও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র কতটা গভীরে তা বুঝা গেল কবি সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার গুজবে!
এমনকি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী তারা ঢাবি উপাচার্যের বাস ভবনে হামলা করে, যাতে ছাত্রলীগ পাল্টা আঘাত করে। ফলে দুপক্ষের সংঘর্ষ বেধে গেলেই কয়েকজন মারা যাবে বলে তাদের পরিকল্পনা ছিল। আর এই লাশ নিয়েই শিক্ষার্থীরা সরকার পতন আন্দোলনে যাবে। তাদের আঘাত করার প্লানটা ছিল বহুমুখী। কি মিডিয়া, কি মাঠ, কি সোশ্যাল মিডিয়া, কি মেয়েদের হল- সবকিছু একই সাথে তারা নিয়ন্ত্রণ করছিল। সব কিছু একই সাথে নিয়ন্ত্রণ করা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কি করে সম্ভব? যেটা একমাত্র জামায়াত, শিবির ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়?
টাকার গরম যেমন থাকে ৪৮ ঘন্টা, তেমনি তারাও যেন তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেই মাঠে নেমেছিল? একের পর এক গুজব ছড়াতেই থাকে গুজবকারীরা। কখনও ছাত্র হত্যা, কখনও ছাত্রী নির্যাতন, কখনও হল থেকে বের করে দেওয়ার গুজব আরো কত কি? সরকার ছাত্রলীগই যেন তাদের মূল প্রতিপক্ষ? ছাত্রলীগ নেত্রী এশাকে জুতার মালা পরানো? বোঝার বাকি রইলো না ষড়যন্ত্রের তীরের ঠিকানা?
ঢাবির শিক্ষক মামুনের সাথে তারেক জিয়ার পরিকল্পনা। এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হিসেবে লন্ডনে বসে সেই কাজটি সুপরিকল্পিতভাবে তারেক জিয়া করলেও এর পেছনে দেশী-বিদেশী অনেক চক্র জড়িত। কিন্তু তাদের সেই প্লান গুঁড়িয়ে যায়। এমনকি একের পর এক গুজব ছড়িয়েও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি ষড়যন্ত্রকারীরা।
সাম্প্রতিক আন্দোলনে বিএনপির ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের রহস্যটা কিন্তু জাতির সামনে উঠে এসেছে। রায় হবার পর থেকেই বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি আন্দোলন করে আসছিল বিএনপি। রহস্যজনকভাবে তারা বন্ধ করে দেয় সেই আন্দোলন। কারণ একটাই, আরো বড় মাস্টারপ্লান আর ইস্যু তাদের হাতে চাই। এখনো চুপ নেই তারা।
বিচক্ষণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল রকমের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ভেস্তে যায় তারেক জিয়ারসহ ষড়যন্ত্রকারীদের মাস্টারপ্ল্যান। কোটা বাতিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার পরেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উস্কানির পর উস্কানি দিয়েই যাচ্ছে বাম আর সুশীল নামের কোকিলরা। স্বাধীনতাবিরোধীরা তো আছেই। তৃতীয় শক্তি নামের ওস্তাদ মান্না, জাফরুল্লাহদের হঠাৎ নীরবতা দেশের সংকটময় অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন শুভ ইঙ্গিত দেয় না নিশ্চয়!
যে নারীদের ক্ষমতায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমস্ত বিশ্বে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন, সেই নারীদেরও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বেঁধে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করার এ অপচেষ্টা কাদের? তাহলে কি ছিল এ আন্দোলন? সার্বিক পরিস্থিতি এটাই বলছে, সর্বোপরি কোটা আন্দোলনের ভেতরে ঢুকে সরকার পতনই ছিল এই আন্দোলনের লক্ষ্য।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আসে বহুমুখী বক্তব্য, ৯৬ সালে শুরু হওয়া কোটা বিরোধী আন্দোলনকে নাকি তারা ফলো করছেন বলে বক্তব্যে উঠে আসে (সূত্র:৭১ টিভি)। যা ছিল স্বাধীনতা বিরোধী চক্র জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন। ভেবে দেখার বিষয় এখানে সাধারণ শিক্ষার্থী আবেগকে কি পরিমাণ কাজে লাগানো হয়েছে?
সবকিছুই যেন একই সূত্রে গাঁথা। উন্নয়ন সহ্য না করতে পারা, উন্নয়নের দুর্জয় গতিকে বাধাগ্রস্ত করে দেশকে পঙ্গু আর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করাই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। যে নেত্রী শিখিয়েছেন, বিএনপির রেখে যাওয়া তলা বিহীন ঝুড়ির মত দেশটির উন্নয়ন কিভাবে করতে হয়, মাথাপিছু আয় কিভাবে বাড়াতে হয়, যিনি একাত্তরের কলঙ্ক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দন্ড কার্যকর করে দেশটাকে ধুয়ে মুছে পবিত্র করেছেন, সেই নেত্রীর বিরুদ্ধেই নোংরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বামাতি, জামায়াতি নামের আকামরা।
বিএনপি, জামায়াতের টার্গেট এখন শুধুই ঢাকা। ঢাকাকে অকার্যকর করতে পারলেই সরকার পতন করা সম্ভব। এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই ষড়যন্ত্রকারীরা এগুচ্ছে। অতীতে জামায়াত-শিবির, বিএনপি, হেফাজত শত চেষ্টা করেও ঢাকা দখল নিতে পারেনি। তাই এই আন্দোলনে পরিষ্কারভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেট রাজধানী। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি, জামায়াতের টার্গেট ঢাকার পতন।
ষড়যন্ত্রটা কতটা শক্তিশালী ছিল, সুসংগঠিত ছিল আর লক্ষ্য কতটা পরিষ্কার ছিল তা লন্ডনে ক্রীড়া উপ মন্ত্রী আরিফ খান জয়ের উপর বিএনপি নেতাদের সন্ত্রাসী হামলা, ৭১ টিভির সুদক্ষ সাংবাদিক ফারজানা রূপার উপর জামায়াত-শিবিরের হামলাই বলে দেয়? যিনি রক্তের ধমনী শিরা থেকে শুরু করে আত্মা, মননে নিশ্বাসে বিশ্বাসে দেশকে বহন করে চলেছেন তিনিই তো বুঝবেন দেশের শরীরে কি আঘাত হচ্ছে? তিনি অনুধাবন করে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিলেন। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া বঙ্গতনয়া শেখ হাসিনা। তবুও সচেতন থাকতে হবে, যাতে নোংরাদের বিষাক্ত ছোবলের বলি হতে না হয় দেশকে। নিপাত যাক ষড়যন্ত্র আর এগিয়ে যাক মানবতার অগ্রযাত্রা।
লেখক : শিক্ষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
এইচআর/এমএস