দেশজুড়ে

বোরোতে ব্লাস্ট রোগে দিশেহারা কৃষকরা

বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা। ধানের শীষ শুকিয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। মাঠভরা ফসল থাকলেও সেগুলো ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। অনেক কৃষক ধানের এ অবস্থা দেখে মাঠেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।

Advertisement

সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের উল্টর নওয়াবশ গ্রামের কৃষক সেলিম (৩৮) বলেন, ৬০ হাজার টাকা খরচ করে এবার তিন একর জমিতে ২৮ ধান আবাদ করেছি। ধানের শীষ বের হয়েছে। ইতিমধ্যে শীষের গোড়ায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ওষুধ স্প্রে করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ব্লাস্ট রোগ ধরার কারণে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে।

একই এলাকার কৃষক তালেবের (৫০) দুই বিঘা জমির ২৮ ধানেরও একই অবস্থা।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ছত্রপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪২) বলেন, এবার ৬ বিঘা জমিতে ২৮ ধান আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি ৫ হাজার টাকা করে খরচ গেছে। ব্লাস্ট রোগে ১৫শ টাকার ওষুধ স্প্রে করেও কোনো লাভ হয়নি। তাই আক্রান্ত ধান গাছ কেটে খড় করে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে।

Advertisement

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ১১ হাজার ৮৪২ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৭ হেক্টর। ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন। এরমধ্যে হাইব্রিডে ৪ দশমিক ৭৬ মেট্রিক টন, উফশি ব্রি ধান-২৮ এ ৩ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন এবং স্থানীয়তে ১ দশমিক ৯৪ মে.টন। এবার ৯টি উপজেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে-১৪ হাজার ১৮৫ হেক্টর, উলিপুরে-২১ হাজার ৯৭৫ হেক্টর, চিলমারীতে-৬ হাজার ৮০০ হেক্টর, রৌমারীতে-১০ হাজার ১৫০ হেক্টর, রাজিবপুরে-২ হাজার ৭১০ হেক্টর, ভূরুঙ্গামারীতে-১৬ হাজার ২৭৫ হেক্টর, নাগেশ্বরীতে- ২১ হাজার ৮১২ হেক্টর, ফুলবাড়িতে-১১ হাজার ৬৫০ হেক্টর এবং রাজারহাটে-১২ হাজার ১৯০ হেক্টর ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে জেলায় ১১ দশমিক ১৫ হেক্টর জমির ফসল ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা বলছেন- ব্লাস্ট রোগ ৭০ থেকে ৮০ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে গেছে।

বর্তমানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে শতশত একর ফসলি জমির কৃষকদের। বোরো ধান খেতে শীষ বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে ব্লাস্ট ভাইরাসে আক্রমণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ধানখেত। এতে ধান দেখা গেলেও ধানের ভেতরে নেই কোনো চাল। আথৎ মাঠের ফসল চিটায় পরিণত হচ্ছে । প্রথমে শীষের গোড়া পচে যায়। এতে করে ধান গাছের ওপরের অংশে রস পৌঁছাতে না পারায় তা দানা পুষ্ট হতে পারে না। শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে শীষ বের হওয়া ধান। এদিকে এ বিষয়ে কৃষি অধিদফতর থেকে মিলছে না কোনো সদুত্তর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, ব্লাস্ট রোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা এখনও শুরু হয়নি। এ জেলায় যাতে ব্লাস্ট রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করতে না পারে সেজন্য তৎপর রয়েছে কৃষি বিভাগ।

তিনি বলেন, স্টেনজা, ট্রুপার, সেলটিমা, উল্কা, নোভিটা ওষুধ জমিতে স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দিনে ও রাতে আবহাওয়ার তারতম্য থাকায় পাতা ব্লাস্ট , গিট ব্লাস্ট এবং নেক ব্লাস্ট ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ারর সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য কৃষকদেরকে জমিতে পানি ধরে রাখা এবং ধানের শীষ বের হওয়ার আগে ও পরে দুই বার করে স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

Advertisement

নাজমুল হোসাইন/আরএ/আরএআর/এমএস