‘আমি গাড়ি অল্প গতিতে চালাতে পারি কিংবা তৈল কম খরচ করার জন্যে বিভিন্ন সমস্যা দেখাতে পারি। এতে করে আমি চাইলে একজন রোগীকে মেরে ফেলতে পারি। কিন্তু তা না করে আমি তার জীবন বাঁচাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে যাই। রোগী বাঁচানোর যে আনন্দ, এই আনন্দই আমাকে এ পেশায় টিকিয়ে রেখেছে। ভীষণ ভালোবাসি এ পেশাকে। তাই প্রায় দীর্ঘ ২৬ বছর এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছি বলে জানালেন রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক ভূপাল চন্দ্র বড়ুয়া (৫৫)।’
Advertisement
আরও পড়ুন : ২৬ বছর ধরে রোগীর জীবন বাঁচাতে ছুটছেন তিনি
অষ্টম শ্রেণি পাস ভূপাল চন্দ্র ১৯৯২ সালে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে কাজে নিয়োজিত হন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়ে যাচ্ছেন রাঙ্গামাটিবাসীকে।
সোমবার সকালে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের সামনে কথা হয় ভূপাল চন্দ্র বড়ুয়ার সঙ্গে। ভূপাল চন্দ্রের বাড়ি চট্টগ্রাম হাটহাজারি এলাকায়। তার স্ত্রী ও সন্তান সেখানেই থাকেন। শুধু মাত্র পেশাগত দায়িত্ব নয় মানবিক টানে তিনি তেমন একটা কর্মস্থল ত্যাগ করেন না। ভূপাল চন্দ্র বড়ুয়ার দুই ছেলে। একজন বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরি করছেন এবং অন্যজন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছে।
Advertisement
আরও পড়ুন : ২০ বছর ধরে রোগী নিয়ে ছুটছেন তিনি
ভূপাল চন্দ্র বড়ুয়ার এই পেশা আগামী তিন বছর পর শেষ হবে। তিনি অবসরে চলে যাবেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রোগীদের সেবা করতে চাই বলে আশা ব্যক্ত করেন এ চালক।
দীর্ঘ আলাপচারিতায় অ্যাম্বুলেন্স চালাতে গিয়ে শত স্মৃতিময় ঘটনার কথাই জানান তিনি। একটি ঘটনার কথা বলতেই তার চোখে মুখে আনন্দ উল্লাস দেখা যায়। প্রায় এক বছর আগে রাঙ্গামাটি খেপ্পাপাড়ার বাসিন্দা এক রোগী জেনারেল হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া দিতে পারলেও সেখানে গিয়ে টাকা সংকটের কারণে ওষুধ কিনতে ও মেডিকেলে ভর্তি করতে অসুবিধা হচ্ছিলো। এসময় তিনি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ফিরিয়ে দিয়ে তাকে চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেছিলেন। যদিও পরে রোগীর পরিবার সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং বাসায় নিমন্ত্রণও করেছিলেন তাকে। এমন শত গল্পের মাঝে এ পেশায় খুঁজে পাওয়া নিজের জন্য আনন্দটুকু প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন : রোগীর সেবাই তার নেশা
Advertisement
এখানেই সীমাবদ্ধ ছিলো না আলাপচারিতা। তিনি জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটিতে চাকরি করতে এসেছিলো যখন, তখন অ্যাম্বুলেন্স ছিলো কম। তাই মানুষের সেবা প্রদানে নানান সমস্যা হতো। এমনকি নিজে কয়েক বছর আগে একবার স্ট্রোক করেছিলেন। তখন তিনি রাঙ্গামাটি হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য পাননি কোনো অ্যাম্বুলেন্স। পরে অন্য এক গাড়ি ভাড়া করে চট্টগ্রাম যান তিনি।
এখন রাঙ্গামাটিতে প্রায় ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স আছে বলে জানান তিনি। কিন্তু আরও অ্যাম্বুলেন্স হলে রাঙ্গামাটিবাসীর জন্য উপকার হবে বলেও মন্তব্য করেন রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক ভূপাল চন্দ্র বড়ুয়া।
তবে অবসর জীবনে স্বল্প বেতনে হলেও এই মহান পেশাটি পালন করে যেতে চান তিনি।
এমএএস/এমএস