রাজনীতি

তারেকের পাসপোর্ট স্যারেন্ডার : ‘প্রতিমন্ত্রীকে প্রমাণ করতে হবে’

লন্ডনে অবস্থানরত ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন’- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সোমবার আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিমন্ত্রীকে বক্তব্যের প্রমাণ দিতে হবে, ব্যর্থ হলে তারেক রহমানসহ জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এছাড়া বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন >> তারেকের নাগরিকত্ব বর্জন : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে লিগ্যাল নোটিশ

সোমবার দুপুরে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠান। এক প্রতিক্রিয়ায় জাগো নিউজকে তিনি এ তথ্য জানান।

Advertisement

দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘গত শনিবার লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট হাইকমিশনে জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। সেই তারেক রহমান কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন?’

তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানোর পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারেক রহমানকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখানোর আহ্বান জানানো হয়।

আরও পড়ুন >> তারেককে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখানোর আহ্বান আ.লীগের

এ বিষয়ে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার জানার কথা যে, অন্য কোনো দেশের নাগরিক যদি বৃটিশ পাসপোর্ট গ্রহণ করতে চান তাহলে তার নিজ দেশের পাসপোর্ট ত্যাগের প্রয়োজন থাকে না। এটা ওনার জানার কথা। অসংখ্য মানুষ আছে যারা বাংলাদেশ ও বৃটিশ নাগরিক।’ তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট প্রটোকল সম্পর্কে ওনার (প্রতিমন্ত্রীর) ধারণা আছে। তারপরও উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা হলো সরকারের মন্ত্রীরা বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এটা তারই অংশ।’

Advertisement

রিপন বলেন, ‘দেশের মানুষ এসব বিশ্বাস করে না। তারেক রহমান বাংলাদেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন- এটা প্রতিমন্ত্রীকে প্রমাণ করতে হবে।’

তারেক রহমানকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখানোর কথা বলে ক্ষমতাসীন দল যে সংবাদ সম্মেলন করেছে সে বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘না, আমরা দেখাব কেন? বিতর্ক যারা তুলেছে তাদের দায়িত্ব দেখানোর যে তিনি এ দেশের নাগরিক নন বা পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করেছেন। এটা তো তারা দেখাবেন, আমরা দেখাব কেন? তারা বিতর্ক তুলবেন, আমরা বিতর্কে অংশ নেব নাকি? আমাদের তো বিতর্কে অংশ নেয়ার দরকার নেই। তারা যেহেতু বিতর্কটা তুলেছেন প্রশ্নটা তাদের করেন যে, আপনারাই বিতর্ক তুলেছেন, বিএনপি তোলেনি, সুতরাং আপনারাই দেখান তারেক রহমান পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান এদেশের বৈধ নাগরিক, তিনি পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করেননি। যদি বাংলাদেশ সরকার তার পাসপোর্ট রিনিউ না করে, তার দায়দায়িত্ব সরকারের, তারেক রহমানের নয়। কারণ তিনি এখন বিদেশে চিকিৎসাধীন।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি এই বক্তব্য (আওয়ামী লীগের) শুনে অবাক হয়েছি। তারেক রহমান জন্মগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেছেন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন। দেশের প্রতিকূল অবস্থার কারণে আজ দেশ চরম সংকটে। এ কারণে তিনি দেশে আসতে পারছেন না।’

তিনি বলেন, ‘তারা যে বলেছেন, তারেক রহমান পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করেছেন, তিনি এ দেশের নাগরিক নন। এটা যিনি বলেছেন,তার দায়িত্ব প্রমাণ করার। আমার নাগরিকত্ব নেয়ার অধিকার তো সরকারের থাকবে না। রাষ্ট্র কিন্তু তার জন্মগত নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারে না। এখন তারেক রহমান এ দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি কেন নাগরিকত্ব স্যারেন্ডার করবেন? কেন পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করবেন? এতে বোঝা যায় সরকার তারেক রহমানকে কতটা ভয় পায়। তাকে ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই।’

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ নয় বছর ধরে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন তারেক রহমান। এক/এগারোর সময়ে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানে অবস্থান করে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা দেন আদালত। এখন তিনি কারাগারে আছেন। ওই মামলায় ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয় খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে। আসামি সবাইকে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়।

কেএইচ/জেএইচ/এমএআর/আরআইপি