জাতীয়

বন্ধ তুরাগ পরিবহন : লাপাত্তা সেই চালক-হেলপার

রাজধানীর বাড্ডায় তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় বন্ধ রয়েছে পরিবহনটির চলাচল। মামলার পর বাসটি শনাক্ত করা গেলেও লাপাত্তা চালক, হেলপার ও কন্টাক্টর।

Advertisement

উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে তুরাগ পরিবহনের দুই শতাধিক বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ জানায়, রোববার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তুরাগ পরিবহনের প্রায় অর্ধশত বাস আটক করে চাবি নিয়ে নেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর সোমবার সকাল থেকে এ পরিবহনের সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে রোববার বিকেলে গুলশান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর স্বামী। মামলা নং ২৬। তবে পুলিশ সিসি টিভি ফুটেজ দেখে বাসটি সনাক্ত করলেও অভিযুক্তদের কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি।

Advertisement

গত শনিবারের (২১ এপ্রিল) ওই ঘটনার সুরাহা না হওয়ায় রোববার দুপুরে উত্তরায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তুরাগ পরিবহনের বাস আটক করে শিক্ষার্থীরা।

রাতে উত্তরা পূর্ব থানায় মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা অভিযুক্ত চালক ও হেলপারকে আটক করে থানায় সোপর্দের দাবি জানায়। কিন্তু মালিকপক্ষ সময় চাইলে সেটি প্রথমে নাকচ করে শিক্ষার্থীরা। পরে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকীর হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সোমবার বিকেল পর্যন্ত সময় দেয়। এ সময়ের মধ্যে মালিকপক্ষ অভিযুক্তদের পুলিশে সোপর্দ না করলে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্র পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, বাসে যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত তুরাগ পরিবহনের চালক, হেলপার ও কন্টাক্টরকে দ্রুত পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে হবে। এ জন্য আমরা মালিকপক্ষকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। বলেছিলাম তাদের আটক না করা পর্যন্ত তুরাগ পরিবহনের কোনো বাস চলাচল করতে দেখা গেলে সেগুলো আটকে দেয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দোষীরা পলাতক। তাই যেসব বাস আটক করা হয়েছিল তা ছাড়া হয়নি।

পারভেজ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই মালিকপক্ষ দ্রুত বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান করুক। নয়তো সোমবার বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামবে। সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।

Advertisement

উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, গুলশান থানায় ওই শিক্ষার্থীর স্বামী মামলা করেছেন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। মালিকপক্ষ বিকেল পর্যন্ত সময় নিয়েছে। আশা করছি বিষয়টি সমাধান হবে।

গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক তাপস কুমার জানান, মামলায় তুরাগ পরিবহনের একটি বাসের চালক, তার সহকারী এবং ভাড়া আদায়কারী এ তিন জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।

তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত কাউকেই শনাক্ত করা যায়নি। পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের সন্ধান মেলেনি।

অন্যদিকে তুরাগ পরিবহনের বাস টঙ্গি স্টেশন রোড থেকে যাত্রাবাড়ী সায়েদাবাদ রুটে চলাচল করে। তবে সোমবার সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্য পরিবহনের বাস চলাচল করলেও বন্ধ রয়েছে তুরাগের বাস। উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ৪০টির বেশি বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

সেখানকার একটি বাসের চালক সবুজ মিয়া জানান, বাসগুলো কাল রাত থেকে আটকা রয়েছে। বাসের পাহারায় বাসেই রয়েছি।

অন্যদিকে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে সকাল থেকে বৈঠকে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ। বিকেলে প্রশাসনিক পর্যায়ে ফের বৈঠক বসবে।

উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এইচ মোবারক জাগো নিউজকে জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একমত। তবে সহিংসতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু যাতে না ঘটে সেটি দেখা হচ্ছে।

ভারপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর ফায়েজ এম সিরাজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে আমরা ঘটনার সুষ্টু তদন্ত ও দোষীদের বিচার চাই।

জেইউ/এএইচ/এমএস