দেশে হৃদরোগের অস্ত্রোপচারের (কার্ডিয়াক সার্জারি) সুযোগ-সুবিধা এখনো পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কার্ডিয়াক সার্জনের অপ্রতুলতার কারণে ঢাকার বাইরে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে হৃদরোগীদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না।হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে বর্তমানে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কার্ডিওলজিস্ট ও কার্ডিয়াক সার্জনের আনুমানিক মোট সংখ্যা মাত্র ৬শ’জন। তন্মধ্যে কার্ডিয়াক সার্জনের সংখ্যা ২শ’জন। তারা বলেন, গত তিন দশকে দেশে কার্ডিয়াক মেডিসিনের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক সমমানের হলেও সেই তুলনায় কার্ডিয়াক সার্জারির চিকিৎসা সুবিধার বিস্তার ঘটেনি।মঙ্গলবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত জাতীয় সম্মেলন-২০১৫ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের কার্ডিওলজিস্ট ও কার্ডিয়াক সার্জনরা হৃদরোগের চিকিৎসার সফলতা, সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করেন।কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মহিবুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব প্রফেসর ডা. এম ইকবাল আর্সলান।আরো বক্তব্য রাখেন কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল শাফি মজুমদার ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এস টি এম আবু আজম।অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক বলেছেন, শর্টকাট উপায়ে দক্ষ কার্ডিয়াক সার্জন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়ভিত্তিক পড়াশুনার পাশাপাশি হাতে কলমে শিক্ষাগ্রহণ করার মাধ্যমেই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কার্ডিয়াক সার্জন হওয়া সম্ভব।তিনি বলেন, দেশে কার্ডিয়াক মেডিসিন পদ্ধতিতে চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা আন্তর্জাতিক সমমানের হলেও সেই তুলনায় কার্ডিয়াক সার্জারির সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি।কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম মহিবুল্লাহ বলেন, দেশে কার্ডিয়াক সার্জারি প্রয়োজন এমন রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়লেও সে তুলনায় কার্ডিয়াক সার্জনের সংখ্যা বাড়েনি। দেশে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন এমন হাজার হাজার হৃদরোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে আরো ১০ গুণ বিশেষজ্ঞ কার্ডিয়াক সার্জন প্রয়োজন।তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে মেডিকেল কলেজ ও জেলা সদর হাসপাতালে অবিলম্বে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার চালু করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্ডিয়াক সার্জন, নার্স ও টেকনোলজিস্টের পদ সৃষ্টির জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান বলেন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কার্ডিয়াক সার্জন তৈরিতে কার্ডিওলজি ও কার্ডিয়াক সার্জনদের সম্মিলিতভাবে পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দেশে হৃদরোগের চিকিৎসার দক্ষ জনবল তৈরিতে কী কী করণীয় সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেলে বিএমএ তাদের পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেন।বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসাসেবার সম্প্রসারণে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে জুনিয়র কনসালটেন্ট, সিনিয়র কনসালটেন্ট, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করতে হবে। তাদেরকে প্রনোদণামূলক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সেখানে পদায়ন দিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) প্রকাশিত হেলথ বুলেটিন-২০১৫ অনুসারে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫শ’৭০, এক লাখ ৬০ হাজার ৬, এক লাখ ৬১ হাজার ৯শ’৫৮, এক লাখ ৬৩ হাজার ৮শ’১৩, এক লাখ ৭৪ হাজার ৩৬৬ ও এক লাখ ৭২ হাজার ২শ, ৬৯ জন।একই সময়ে ইনডোরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৩ হাজার ৯শ’৪৬, ৪১ হাজার ৫শ’৫৪, ৪২ হাজার ৭শ’৭৯, ৪৩ হাজার ২শ’ ৭৫, ৪৪ হাজার ৫শ’ ৫৯ ও ৪৩ হাজার ৩শ’ ৪১ জন।এমইউ/বিএ
Advertisement