দেশজুড়ে

সেদিনের বিধবারা আজও বঞ্চিত

তারা ৪৭ বছর ধরেই কাঁদছেন। কিন্তু এখনও পাননি স্বামী হত্যার বিচার। একদিকে প্রিয়তম স্বামী হারানোর বেদনা আর অন্যদিকে জীবন যাপনের যন্ত্রণা নিয়ে পার করেছেন ৪৭টি বছর। ওরা ছিল প্রায় ৩শ বিধবা রমনী। কেউ ভিক্ষা করে, কেউ বা দিনমজুরের কাজ করে জীবনযাপন করছেন।

Advertisement

আজ ২৩ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ের জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি ও এদেশীয় দোসররা সদর উপজেলার ১৫টি গ্রামে তিন হাজারেরও বেশি নিরীহ বাঙালিকে জাঠিভাঙ্গায় জড়ো করে হত্যা করেছিল। সেই গণহত্যায় আত্মদানকারীদের স্ত্রীরা বেঁচে আছেন অর্ধাহারে অনাহারে। তাদের খবর নেয়ার কেউ নেই। এমনকি দিনটি স্মরণে নেই সরকারি বা বেসরকারি সংগঠনের কোনো কর্মসূচি।

১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের চকহলদি, সিঙ্গিয়া, চন্ডিপুর, বাসুদেবপুর, গৌরিপুর, মিলনপুর, জগন্নাখপুর, শুকানপুখুরীসহ ১৫টি গ্রামের তিন সহস্রাধিক নিরীহ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। জাঠিভাঙ্গা এলাকায় তাদের পথরোধ করে এ দেশীয় স্বাধীনতা বিরোধীরা।

পরদিন ২৩ এপ্রিল সকালে পাকসেনাদের খবর দেয় স্থানীয় রাজাকাররা। পরে নিরীহ এই বাঙালিদের লাইনে দাঁড় করিয়ে পাকহানাদাররা গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মরদেহ পাশের পাথরাজ নদীর তীরে ফেলে সামান্য মাটি চাপা দেয় তারা। একদিনেই বিধবা হন প্রায় সাড়ে ৩শ নারী। সেই বিধবারা বেঁচে আছেন খেয়ে না খেয়ে। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও অনেকেই বয়স্ক বা বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না আজও। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বামীহারা বিধবা ও স্বজনহারা এসব মানুষগুলো আজও পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা।

Advertisement

সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের তিরপা মোহন গণহত্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন।প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা করতে পা পেরে পঙ্গু জীবনযাপন করছেন তিনি।

জগন্নাথপুরের আশামনি বেওয়া ও জাঠিভাঙ্গা বুড়াশিব গ্রামের ভুটরী বেওয়া অভিযোগ করে বলেন, একটি বিধবা ভাতার কার্ডে তিন মাস পরপর পাই মাত্র ৯শ টাকা। এ দিয়ে কী সংসার চলে? আর শীতের মৌসুম এলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাই একটি কম্বল। সারা বছর আর কেউ কোনো খবর রাখে না।

ঠাকুরগাঁও ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদিউদ্দৌজা বদর জানান, গণহত্যায় সকল শহীদদের বিধবাদের স্বীকৃতির জন্য অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কিন্তু সরকার বিষয়টি নজরে নেয়নি। আমরা সকলে চাই ওই সকল বিধবাদের স্বীকৃতি ও তাদের স্বামী হত্যার বিচার হোক।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আকতারুজ্জামান জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় জাঠিভাঙ্গা গণহত্যার শহীদের পরিবারগুলোর স্বীকৃতি ও সরকারি সুযোগ সুবিধার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করব।

Advertisement

রবিউল এহ্সান রিপন/এফএ/জেআইএম