জাতীয়

‘এক সেকেন্ডেই আমার সব শেষ হয়ে গেল’

‘এক সেকেন্ডেই আমার সব শেষ হয়ে গেল। বিআরটিসির গাড়িকে আমি হাত তুলে সিগন্যাল দিয়েছিলাম। থামলো না। ওপর দিয়ে চলে গেল। বাসটি একটু ব্রেক করলে কী হতো?’

Advertisement

অশ্রুভেজা চোখে কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন রোজিনা আক্তার (১৭)। শুক্রবার রাতে বেপরোয়া বাসের চাপায় পা হারিয়েছেন সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার বাসার এই গৃহকর্মী। ব্যথায় কাতরাতে থাকা কিশোরীটি সামনের অন্ধকার ভবিষ্যতের চিন্তা করেই হয়তো এই বিলাপ করছেন।

শনিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পঙ্গু হাসপাতালে জরুরি বিভাগের মূল প্রবেশ পথেই পাওয়া গেল সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজাকে। কষ্টে বিমর্ষ তিনি। জানালেন, ডাক্তাররা চেষ্টা করেও রোজিনার ডান পা রাখতে পারেননি। এখনো ব্যথায় কাতরাচ্ছে মেয়েটি।

পোস্ট অপারেশন থিয়েটারের দিকে যেতে দেখা গেল, মানুষের জটলা। চারদিকে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের হাহাকার। ওয়ার্ডের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ডান পা কাটা মেয়েটি বেডে শুয়ে আছেন। পাশে ছোট বোন সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। রাত থেকে অদ্যবধি কিছু খাননি। কোনোভাবে কিছু খাওয়ানো যায় কি না সেই চেষ্টা করছেন পাশে থাকা রোজিনার আরেক আত্মীয়।

Advertisement

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জানা গেল, রোজিনা সাত ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় গ্রামে থাকে তার পরিবার। দীর্ঘ সাত বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজার বাসায় কাজ করছেন তিনি।

রোজিনার বোন-জামাই মানিক বলেন, সম্প্রতি আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছি। সে (রোজিনা) প্রতিদিন সকালে আমাকে ফোন দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতো, সময়মতো অফিসে যেতে বলতো। তার ভাষায়, শশুরবাড়ির সব সদস্যের মধ্যে রোজিনা ছিল বুদ্ধিমতি। কর্মঠ। ভালো।

একই কথা জানালেন সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এক কথায় সেই ছিল আমার পরিবারের সব। আমি ও আমার স্ত্রী চাকরিজীবী। একমাত্র মেয়েও সারাদিন খুব একটা বাসায় থাকে না। পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রোজিনা এত ভালো যে, সে পরিবারের সব খোঁজ রাখতো। আমি খাবো, কতটুকু খাবো সেটাও সে বলে দিতো। আমরা সেটা মেনেই চলতাম। তার ভাষায়, এমন সৎ, বুদ্ধিমান ও কর্মঠ মেয়ে খুব কমই হয়।

ওই ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে আসার আগে দেখা গেল, দু’একজন আত্মীয় রোজিনাকে ঘুমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। রোজিনা সেটা করতে পারছে না। চিৎকার করে কান্না করবে, সেটিও করতে পারছে না। অনায়াসে দু’চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, শুক্রবার (২০ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিসির একটি দোতলা বাস রোজিনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পায়ের ওপর দিয়ে চলে। এরপর তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ওই বাসের চালক শফিকুল ইসলামকে (৩২) আটক করেছে পুলিশ।

এমএ/বিএ/আরআইপি