প্রধানমন্ত্রীর সাত দফা প্রস্তাব

আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন তা সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বে বাণিজ্য প্রশাসন আরও উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করে তুলতে কমনওয়েলথ দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব দেন। বুধবার লন্ডনে ‘কমনওয়েলথ’স রোল ইন প্রমোটিং ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন’ শীর্ষক এক বৈঠকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। আন্তঃকমনওয়েলথ ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনার উন্নয়নের জন্য ৭ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে। ১. সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শিল্প সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতার খাত ভিত্তিক সমীক্ষা প্রয়োজন। ২. ছড়িয়ে থাকা বিনিয়োগ সম্ভাবনাসহ অভিন্ন বিনিয়োগ নীতি, নির্দেশনা ও কৌশল গ্রহণ। ৩. বাণিজ্য সহায়ক সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন এবং পিটিএ ও এফটিএ’র অশুল্ক বাধা কমিয়ে আনা। ৪. সেবা বাণিজ্যের জন্য উদারশা সন এবং স্বতন্ত্র পেশার সেবা সুবিধার জন্য খোলাবাজার চালু। ৫. প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ যাতায়াত এবং সরকারি ও বেসরকারি ক্যাটাগরিতে নির্দিষ্ট লোকদের জন্য ভিসা সহজীকরণ। ৬. অবকাঠামো এবং যোগাযোগ প্রকল্প গ্রহণ এবং ৭. এসএমই এবং ব্লু ইকোনমি খাতসহ উৎকৃষ্ট কেন্দ্র এবং প্রতিষ্ঠানের সহায়তা এবং উন্নয়ন, আরএন্ডডি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল গঠন।

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে, তাদেরকে বৃহত্তম সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনা শক্তির পরিচালনায় কমনওয়েলথকে অবশ্যই এ বিপুল মেধাবীদের কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য আমাদের অবশ্যই প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে টানা পোড়েন, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় হুমকি এবং অর্থবাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় কমনওয়েলথ কিভাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনার উন্নয়নে ইতিবাচক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে সেটি এখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্যের অনুমিত পরিমাণ ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামান্য বেশি। বিশ্বের জিডিপিতে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের অবদান ১৬ শতাংশ, অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৮টি দেশের এ অবদান ১৯ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কমনওয়েলথ দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির হার ৪ দশমিক ১ শতাংশ, এ তুলনায় ইইউর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কমনওয়েলথ দেশগুলোর জনসংখ্যা ২শ’ কোটির বেশি, যা ইইউর ৪ গুণ। এই হিসেব থেকে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসা ও বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা বোঝা যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটি দেখে খুশি যে, গতবছর প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ বাণিজ্য মন্ত্রীদের বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সে সময় মন্ত্রীরা অভিন্ন সংস্কৃতিকে ‘কমনওয়েলথ ফ্যাক্টর’ হিসেবে আলোচনা করেন। যা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নেই এমন দেশের তুলনায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যকে ২০ শতাংশ সাশ্রয়ী করেছে।

আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনার লক্ষ্যে দেশগুলোকে অবশ্যই অভিন্ন সুযোগ-সুবিধা জোরদার করতে হবে। বাণিজ্য সম্প্রসারণ ব্যতিরেকে কোনো দেশই কাঙ্খিত লক্ষে এগিয়ে যেতে পারেনা। এজন্য আন্তসম্পর্ক জোরদার অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সাত দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন সেগুলো পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সংশ্লিষ্ট সকলেই উপকৃত হবেন- এমনটিই আমাদের বিশ্বাস।

এইচআর/এমএস