দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় এক জামায়াত নেতার বাধার মুখে শোভা শেখ (৯৫) নামে এক ভূমিহীন বৃদ্ধকে নিজ বাড়ির আঙিনায় দাফন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
প্রভাবশালী ওই জামায়াত নেতার বাধার কারণে এলাকার প্রায় তিন একর সরকারি কবরস্থানে দাফনের জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গা পাননি বৃদ্ধ শোভা শেখ।
বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে বিচার চেয়ে ৩১১ জন এলাকাবাসী স্বাক্ষরিত একটি দরখাস্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল সোমবার বিকেলে বীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ৩নং শতগ্রাম ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কাসিমনগর পাবনাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযুক্ত ওই জামায়াত নেতার নাম রমজান আলী (৫০)। তিনি শতগ্রাম ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি এবং এলাকার আয়তুল্লাহ শেখের ছেলে।
Advertisement
অভিযুক্ত রমজান আলী বলেন, আমি কবর খুঁড়তে বাধা দিয়েছি। এখানে (কবরস্থান) দাফন করতে দেইনি। কারও কিছু করার থাকলে করুক।
অভিযুক্ত জামায়াত নেতা রমজান আলী
ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভূমিহীন জাহের আলী শেখের ছেলে শোভা শেখ (৯৫) গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে বার্ধ্যক্যজনিত কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।। ওইদিন মাগরিবের নামাজের পর স্থানীয় কাসিমনগর (২.৭০ একর) সরকারি কবরস্থানে তাকে দাফনের খবর প্রচার করা হয়। কিন্তু ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি রমজান আলীর বাধার মুখে কবর খোঁড়ার পরও শোভা শেখকে দাফন করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাড়ির আঙ্গিনায় তাকে দাফন করা হয়। সরকারি কবরস্থানে গিয়ে কবর খোঁড়া অবস্থায় পাওয়া যায়।
কাসিমনগর পাবনাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম শাহাজাহান মুন্সির কাছে অনুমতি নিয়ে প্রতিবেশী আবুল হোসেনের ছেলে দুলাল হোসেন, লাল চান ও রফিকুল ইসলামসহ লোকজন কবর খোঁড়ার জন্য কবরস্থানে যান। এসময় তারা প্রায় অর্ধেক কবর খোঁড়ার পর একই গ্রামের কবরস্থানের উত্তর পাশে বাড়ি ভুজারু মোহাম্মদের ছেলে রমজান আলী তার লোকজন নিয়ে কবর খুঁড়তে বাধা দেন। এক পর্যায়ে তিনি কোদাল ছিনিয়ে নেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
Advertisement
সমস্যার কোনো সমাধান না হওয়ায় অবশেষে নিরুপায় স্বজনেরা মরহুমের শোবার ঘরের পাশে কবর খুঁড়ে রাত সাড়ে ৮টায় সময় মরদেহ দাফন করে।। এ ঘটনায় গ্রামবাসী দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে কবর খুঁড়তে যাওয়া মরহুমের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক, প্রতিবেশী দুলাল হোসেন, লাল চান ও রফিকুল ইসলাম জানান, রমজান আলী ও তার বাড়ির সদস্যরা কবর খুঁড়তে দেয়নি। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকাবিতণ্ডার এক পর্যায়ে রমজান আলী এই গোরস্থানে শোভা শেখকে দাফন করতে দেয়া হবে না ঘোষণা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
কাসিমনগর পাবনাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম শাহাজাহান মুন্সি জানান, এর আগেও রমজান আলী এ রকম একটি ঘটনা ঘটিয়েছেন। যদিও পরে ওই মরদেহ গোরস্থানেই দাফন হয়েছিল। কিন্তু তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করার সাহস পায় না। রমজান আলী জামায়াতের ওয়ার্ড সেক্রেটারি বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে রমজান আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি বাধা দিয়েছি আপনাদের কী করার আছে করেন।
এলাকাবাসী স্বাক্ষরিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- রমজান আলী ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি। তিনি সরকারি গোরস্তানে কবর খননের পরও শোভা শেখের মরদেহ দাফন করতে দেননি। ফলে শোভা শেখকে বাড়ির আঙ্গিনায় দাফন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করা হলে তিনি ৫ জানুয়ারির মত তাণ্ডব চালাবেন বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। শতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. কেএম কুতুব উদ্দিন জানান, ঘটনার সময় কোনো পক্ষই আমাকে অবহিত করেনি। উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে তবে কোনো সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে অফিস সহকারী জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বাইরে থাকায় দরখাস্তটি এখনও তিনি দেখতে পারেননি।
এমদাদুল হক মিলন/আরএআর/পিআর