দেশজুড়ে

২০ বছর ধরে রোগী নিয়ে ছুটছেন তিনি

একজন রোগীকে সুস্থ করে তুলতে বা বাঁচাতে শুধু চিকিৎসকেরই ভূমিকা থাকে না। এতে জোরালো ভূমিকা রাখেন নার্স, অায়া ও ওয়ার্ড বয়রাও। তবে সবার শুরুতে অবদান থাকে একজন অ্যাম্বুলেন্স চালকের। তার কারণেই একজন আশঙ্কাজনক রোগীর দ্রুত চিকিৎসা করার সুযোগ পান চিকিৎসক ও নার্স। তাই জাগো নিউজের এবারের অায়োজন রোগীর জীবন রক্ষাকারী অ্যাম্বুলেন্স চালকদের নিয়ে।

Advertisement

জসিম উদ্দিন (৫২)। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে আধুনিক ফেনী সদর হাসপাতালের সামনে থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালান। জীবন-মৃত্যুর খেলায় মর্মস্পর্শী অসংখ্য ঘটনার স্বাক্ষী তিনি। আয় রোজগার ভালো না হলেও এ পেশার প্রতি মায়া লেগে গেছে তার। প্রতিনিয়তই বয়ে চলেছেন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রোগী, নিথর মরদেহ।

জসিম উদ্দিনের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলেও শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালান। বাকী দু'জন লেখাপড়া করে।

এ পেশায় কেমন লাগছে জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিদিনই অনেক চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত পার করতে হয়। টাকা-পয়সার কথা চিন্তা না করে রোগী বাঁচাতে স্বজনদের আগেই ছুটতে হয় অনেক সময়। এটা খুব চ্যালেঞ্জিং। এখানেই শেষ নয়। হাসপাতালে রোগী ভর্তি করিয়ে তারপর স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ভালো লাগে যখন রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাই। অনেক সময় রোগী বহনের সময় স্বজনদের কাছে গালি-গালাজও খেতে হয়।

Advertisement

সেখানে কথা হয় শহরের বিরিঞ্চি এলাকার অ্যাম্বুলেন্স চালক মিজানুর রহমান (৩৮)। ১৬ বছর ধরে তিনি এখানে অ্যাম্বুলেন্স চালান। ১ ছেলে ১ মেয়েসহ পরিবারের ৫ সদস্যের ভরণ-পোষণ চালান অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে।

তিনি জানান, এ পেশায় সব সময় সুখ-দুঃখের সঙ্গে বসবাস করতে হয়। মাঝে মাঝে ভাবি এ পেশায় কেন এলাম। গুরুতর কোনো রোগী ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে মারা গেলে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক সময় টাকা দিতে গড়িমসি করে রোগীর স্বজনরা। কখনও কখনও নির্ধারিত টাকার চেয়ে কম দিয়ে বিদায় করেন। তবে খুব ভালো লাগে যখন কোনো রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা বলেন রোগী ভালো আছেন, সুস্থ্য হয়ে উঠবেন।

একই এলাকার আবদুর শুক্কুরের ছেলে মো. বেলাল হোসেন (২২) অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে জীবন নির্বাহ করেন। তার আয়ের উপর পরিবারের ৫ সদস্য নির্ভর করছে। দিন-রাত পরিশ্রম করে স্বজনদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তিনি।

এ পেশার এসে অনেক ঘটনার মুখো-মুখি হতে হয়েছে তাকে। মাঝে মাঝে শুধুমাত্র রোগীকে নিয়ে ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হয়। খুবই চ্যালেঞ্জিং সময় পার করতে হয়। কখনো রোগীর সঙ্গে একজন স্বজন থাকেন তখন তাকে অনেক সহযোগিতা করতে হয়। তিনি আরো বলেন, রোগীকে শুধুমাত্র হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে আমাদের কাজ শেষ হয় না। তাকে ভর্তি করিয়ে, ওষুধপত্র কিনে দিয়ে তারপর ফিরতে হয়।

Advertisement

ফেনী জেলা অ্যাম্বুলেন্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, শহরে প্রায় ৭০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়ে আসছে। ফেনী সদর হাসপাতালে প্রায় ২০টি অ্যাম্বুলেন্স নিয়মিত রোগীদের সেবা প্রদান করছে। এখানে বিভিন্ন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানার অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।

সূত্র জানায়, অ্যাম্বুলেন্স চালকরা মাসিক বেতনে অথবা কমিশনে কাজ করেন। মাসিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা, খাবার বাবদ দিনে ২শ ও রাতে ৩শ টাকা করে পান। আবার প্রত্যেক অ্যাম্বুলেন্সে একজন করে হেলপার থাকে তাদের চালক মাস শেষে সামান্য বেতন প্রদান করে থাকেন। এরা দিনে ১শ ও রাতে ২শ টাকা করে পান।

সূত্র আরো জানায়, ফেনী থেকে ঢাকায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় রোগী আনা নেয়া করেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। অন্যদিকে চট্টগ্রামে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় ভাড়ায় রোগী আনা নেয়া করেন তারা। দৈনিক একটি বা দুটির অধিক ভাড়ায় যেতে পারেন বলেও জানান তারা।

ফেনী জেলা অ্যাম্বুলেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, মহাসড়কের নিত্য যানজট ও অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সামান্য বেতন ও রোগীর স্বজনদের সামান্য বকশিস নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনোমতে দিন পার করছে তারা।

এফএ/এমএস