নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দিয়েছে জাতিসংঘ। সারাদেশে সরকারিভাবে অনেক ঘটা করেই উদযাপন করা হয়েছে এ আনন্দ। এ উন্নয়নশীল দেশেই আহমদ হোসেন নামে এক নাপিতের বসবাস। দেশ বদলায়, মানুষও বদলায়। শুধু বদলায় না আহম্মদ নাপিতদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর জীবনমান। এখনও গাছতলায় বসেই রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে মানুষের চুল-দাঁড়ি কাটেন তিনি। সারা দিনের খাটুনির পর বহু কষ্টে পকেটে করে ঘামে ভেজা এক-দেড়শ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
Advertisement
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের তন্তর বাস স্ট্যান্ডে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় আহমদ নাপিতের। বাস স্ট্যান্ডের বড় একটি গাছের নিচে একটি চেয়ার ও চুল-দাঁড়ি কাটার কিছু সরঞ্জাম নিয়ে গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন তিনি। সেদিন দুপুর পর্যন্ত কোনো কাস্টমার ছিল না আহমদের। তাই চোখে-মুখে ছিল তার হতাশার ছাপ।
আহমদ তার স্বল্প আয়ে চলা কষ্টের জীবনের গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সে গল্পের প্রতি ভাঁজে রয়েছে কেবলই দুঃখ-দুর্দশা। তার বাড়ি জেলার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের বিনাউটি গ্রামে। একটা সময় কৃষি কাজ করলেও গত সাত বছর ধরে তন্তর বাস স্ট্যান্ডে নাপিতের কাজ করছেন। গ্রাম এলাকা হওয়ায় এখনও ১৫ থেকে ২০ টাকায় চুল কাটা এবং ১৫ টাকায় শেভ করতে হয়। প্রতিদিন সকালে বাসে করে বাড়ি থেকে আসেন আবার সন্ধ্যায় বাসে করেই বাড়ি ফেরেন তিনি।
আহমদ জানান, সংসারে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। এক ছেলের বয়স ১১ ও আরেকজনের ৭ বছর। বিনাউটি গ্রামের একটি স্কুলেই তারা পড়ালেখা করে। তন্তর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি মার্কেটে যখন ছোট্ট সেলুনের দোকান ছিল তখন আহমদ তার ছেলেদের টিফিনের জন্য প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে দিতেন। তবে মাসে দেড়েক আগে ওই মার্কেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই এখন পাঁচ টাকার বদলে দুই টাকা করে দেন। কাজ না থাকলে অনেকদিন এই দুই টাকাও দিতে পারেন না। যেদিন পকেট ফাঁকা থাকে সেদিন বাড়ি থেকে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েন আহমদ। তখন বাবা হিসেবে নিজেকে খুব অসহায় মনে করেন তিনি।
Advertisement
আহমদ আরও বলেন, পড়ালেখা করতে পারিনি বলে কোনো চাকরিও করতে পারছি না। কৃষি কাজ করে সংসার চলত না বলে নাপিতের কাজ শিখেছি। যখন মার্কেটে দোকানটা ছিল তখন প্রতিদিন দুই-তিনশ টাকা নিয়ে বাড়ি যেতে পারতাম। প্রতি মাসে এক হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিয়ে যা থাকতো তাতে কোনো-রকম টানাটানি করে সংসার চলত।
দোকানটা ভেঙে ফেলার পর এক মাস বেকার বসেছিলাম। আয়-রোজগার ছিল না তাই সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়েছে। তাই এখন গাছতলায় এসে বসেছি। এখানে প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ টাকার কাজ করতে পারি। এখানকার মানুষগুলো খুব ভালো, কাজ কম হলেও টাকা দিয়ে দেয়। যদিও এত স্বল্প আয়ে সংসার চালানো দায় তারপরও নিজেকে সান্ত্বনা দেই যে দেশে তো অনেক মানুষ বেকার জীবন কাটাচ্ছে, আমি তো বেকার নই।
আহমদের মতো এমন অনেক মানুষই আছেন যারা কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছেন উন্নয়নশীল বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে। তবে গাছতলার নাপিত হলেও আহমদের কাজে সন্তুষ্ট স্থানীয়রা। শিশু ও বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণ-যুবকরাও তার কাছে আসেন চুল-দাঁড়ি কাটাতে।
আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/এমএস
Advertisement