গণমাধ্যম

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬টি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ছয়টি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী বলে জানিয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক পরিষদ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকে সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক পরিষদ এসব ধারার বিষয়ে আপত্তি তুলে ধরে।

বৈঠক শেষে পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল ও দ্যা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরর ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, আজকের বৈঠকটি হয়েছে সম্পাদক পরিষদের অনুরোধে। আমি তিন মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি সত্যিকার অর্থে বলতে চাই উনারা সহযোগিতার স্পিরিটে আমাদের আপত্তিগুলো গ্রহণ করছেন। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কামিটির আগামী ২২ এপ্রিলের বৈঠকে তারাই (তিন মন্ত্রী) উপস্থাপন করবেন যেন স্থায়ী কমিটিতে আপত্তিগুলোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

Advertisement

মাহফুজ আনাম বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২, এবং ৪৩ ধারায় আমাদের আপত্তি। আমরা এ ধারাগুলোকে মনে করেছি যে এগুলো বাকস্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। স্বাধীন সাংবাদিকতা যেটা বাংলাদেশে আমরা খুবই গর্ববোধ করি, খুব গভীরভাবে এটা ব্যহত হবে। এ বিষয়েগুলো আমরা মন্ত্রীদের বুঝিয়েছি, এবং তারা এগুলো সানান্দে গ্রহণ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি যে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি প্রণায়ন হবে, সেটা সত্যিকার অর্থে সাইবার ক্রাইমকেই প্রতিহত করবে। সাংবাদিকতার কোনো রকম স্বাধীনতা খর্ব হবে না। আমরা এটা বিশ্বাষ করে যে, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে একটা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োজন। কেননা এখন যে ধরনের সাইবার ক্রাইম হচ্ছে। সোসাল মিডিয়া, অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন মিডিয়া এমন কিছু ছড়ায় যেটা আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ায়। তাই আইনটা হোক, তবে একটা সুষ্ঠু আইন। যেটা আসালেই তার পারপাস সার্ভ করবে।

আইনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মাদ শহিদুল হক, দ্যা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউজ টু ডে'র সম্পাদক রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, দি নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল কবির, কালেরকণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদসহ ১৯টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক।

জানা গেছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে সেই ধারার বিষয়বস্তুগুলো ঘুরেফিরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাখা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়ার পর এটি ঘিরে বিতর্ক ও সমালোচনা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আপত্তি ওঠা কিছু ধারা বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল।

Advertisement

কিন্তু গত ৯ এপ্রিল সোমবার জাতীয় সংসদে আইনটি উত্থাপনের পর দেখা যায়, তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এমনকি ‘ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি’বিষয়ক ৩২ ধারার মতো আরও কঠিন একটি ধারা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিলটিতে আপত্তি জানিয়েছে। পরে বিলটি চার সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বা তাদের প্রতিনিধিরাও আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, দেশে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও ইউনিয়ন আইনটির কঠোর ও বিতর্কিত কিছু ধারা বাদ দেয়ার দাবি তোলে। এসব দাবি আমলে না নিয়ে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া খসড়াটিই প্রায় হুবহু গত ৯ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বিল আকারে উপস্থাপন করা হয়।

বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, বিলটি সংসদীয় কমিটিতে গেলে পর্যালোচনা করে সংযোজন-বিয়োজন করার সুযোগ থাকবে। কোনো উপধারা যুক্ত করতে হলে সেটিও স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে সংযোজন সম্ভব হবে।

এমইউএইচ/এমবিআর/পিআর/জেআইএম