ক্যাম্পাস

চবিতে ‘সাদা দল’-এ ভাঙনের সুর

 

৩২ বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন পর্ষদে নির্বাচন করে আসছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'সাদা দল'। তবে এবার অভ্যন্তরীন কোন্দলে দীর্ঘদিনের সেই সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। আগামী ২৫ এপ্রিল আসন্ন শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে উপলক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন সংগঠনটির শিক্ষকরা। দুটি ভিন্ন প্যানেল থেকে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা আলাদাভাবে প্রার্থীও মনোনয়ন দিয়েছেন।

Advertisement

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাদা দলের স্টিয়ারিং কমিটিতে একচ্ছত্র জামায়াতপন্থীদের শিক্ষকদের নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বেচ্ছাচারিতা, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা-বঞ্চনা ও আস্থাহীনতাই এ বিচ্ছেদের মূল কারণ। ফলে বর্তমানে সাদা দল থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা জাতীয়তাবাদী ফোরাম গঠন করেছেন। আসন্ন নির্বাচনে এ প্যানেল থেকে ১১ পদে লড়ছেন ১১ জন শিক্ষক। অপরদিকে, সাদা দল থেকেও জামায়াতপন্থীরা ১১ জন প্রার্থী দিয়েছেন। এতে করে বিএনপি ও জামায়াতপন্থীদের মধ্যে বিচ্ছেদ আরও বেশি স্পষ্ট হলো।

বিষয়টি স্বীকার করেন সাদা দল থেকে বেরিয়ে আসা জাতীয়তাবাদী ফোরামের সদস্য ও নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী প্রফেসর ড. এস এম নসরুল কাদির জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার পাইনি। অনেকেই চাচ্ছে জামায়াতের সঙ্গে না থাকতে। আর তাদের সঙ্গে তো অনেকদিন নির্বাচন করলাম। এবার আমাদের শক্তিটাও যাচাইয়ের সময় এসেছে।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত শিক্ষকরা ‘সাদা দল’গঠন করেন। যেখানে দল পরিচালানার জন্য ১৫ সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটি থাকে। যারা দলের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বর্তমানে সাদা দলের স্টিয়ারিং কমিটির ১৫ সদস্যের প্রায় সকলেই জামায়াতপন্থী।

Advertisement

তবে সাদা দলে বিচ্ছেদের বিষয়টি মানতে নারাজ দলের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও মুখপাত্র ড. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, বিএনপির একটি ছোট্ট একটা অংশ জাতীয়তাবাদী ফোরাম থেকে আলাদাভাবে মনোনয়ন নিয়েছে। স্টিয়ারিং কমিটিতে আসতে না পেরে ক্ষোভের কারণে তারা এমনটি করেছে। কেন্দ্রীয় বিএনপিও এ ভাঙন চায় না। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে বেশিরভাগই সাদা দলে আছেন। বিএনপি-জামায়াত মিলেই সাদা দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।

দলত্যাগীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে মনোনয়নের পত্র জমার আগে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি আপনারা সব পদে প্রার্থী দেন। তারপরেও আলাদা হবেন না। কিন্তু তারা তা মানেননি।

চবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ ১১ পদে আগামী ২৫ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫৭ জন শিক্ষক তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। প্রতিবছর এ নির্বাচনে আওয়ামী ও প্রগতিশীল বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'হলুদ দল' ও বিএনপি-জামায়াতপন্থী 'সাদা দলের' মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হতো। তবে সাদা দলের বিভক্তের ফলে এবার ত্রিমুখী লড়াই হবে। যদিও গত তিন বছর ধরে নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করে আসছে হলুদ দল।

এদিকে সাদা দলে বিচ্ছেদকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী ও প্রগতিশীল বাম পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'হলুদ দল'। দলটির স্টিয়ারিং কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবার ই আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ছিলাম এবং জয়লাভও করেছি। এবার তাদের বিচ্ছেদ বা ভাঙনে আমাদের জয় দুই শতভাগ নিশ্চিত। সকল ভেদাভেদ ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধ।

Advertisement

আবদুল্লাহ রাকীব/আরএ/আরআইপি