আন্তর্জাতিক

ধর্ষণ ধর্ষণই, এটা নিয়ে রাজনীতি উচিত নয়

কাঠুয়া ও উন্নাওয়ের ধর্ষণের ঘটনায় ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তীব্র নিন্দা এবং বিক্ষোভ ছড়িয়েছে পড়েছে। তার আঁচ পেয়ে ব্রিটেনের মাটিতেই ফের মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বললেন, ধর্ষণ ধর্ষণই। এ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।

Advertisement

বিরোধীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যখন একটি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়, তখন আমরা এই তুলনা করতে পারি না যে, কোন সরকারের আমলে কতগুলি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। ধর্ষণ সব সময় ধর্ষণই। এটাকে আমরা কীভাবে মেনে নেব?’

মোদি আরও বলেন, ‘শুধু মেয়েদেরই কেন জিজ্ঞেস করা হয় তারা দেরি করে বাড়ি ফিরেছে কেন? কেন ছেলেদেরও এই একই কথা জিজ্ঞেস করা হয় না? মনে রাখতে হবে ধর্ষণের মতো নৃশংস কাণ্ডেও কারও না কারও ছেলেই মূল অভিযুক্ত। ঘটনাচক্রে দেশে কাঠুয়া ও উন্নাও নিয়ে মোদিকে বিঁধেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বিভিন্ন ইস্যুতে নানা সময়ে তাকে ‘মৌনিবাবা’ বলে কটাক্ষ করেছেন মোদি। সেই কটাক্ষই উত্তরসূরিকে ফিরিয়ে দিয়ে মনমোহন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমায় যে পরামর্শ দেন, এখন উনি তা অনুসরণ করুন। আরও বেশি করে মুখ খুলুন।’

গত শুক্রবার ড. আম্বেদকর ন্যাশনাল মেমোরিয়ালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোদি কাঠুয়া ও উন্নাও নিয়ে নীরবতা ভেঙে বলেছিলেন, ‘ভারতের কন্যারা ন্যায়বিচার পাবে। দোষীরা ছাড়া পাবে না।’

Advertisement

বুধবার ব্রিটেনের মাটিতেও এই প্রসঙ্গে মোদির বক্তব্যে বিরোধীদের আক্রমণের কিছুটা জবাব দেওয়ার চেষ্টা ছিল। তিনি বলেন, যখনই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তখন আমাদের দেশে রানীদেরই প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়। আমাদের মেয়েদের এইভাবে ধর্ষিতা হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের। এটা দেশের কাছে বিরাট লজ্জার।

বুধবার মোদি লন্ডনের সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে অনাবাসী ভারতীয়দের একটি সভায় ভাষণ দেন। এর আগে তিনি লন্ডনে পৌঁছালে একদল ভারতীয় কাঠুয়ার নির্যাতিতা বালিকাটির ছবি নিয়ে তার সামনে বিক্ষোভ করেন। প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের মাটিতে নামতেই প্রায় শ’খানেক প্রতিবাদী পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। পোস্টারে লেখা ‘মোদি গো ব্যাক’, ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট মোদি’।

ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে, পার্লামেন্টের সামনে চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন। ব্রিটেনে বসবাসকারী আইনজীবী নবীন্দ্র সিং বলেন, ‘ভারত সরকার কেন কিছু করছে না? সেই সব পরিবারের কথা ভাবুন তো একবার যাদের বাড়িতে এমন ভয়াবহ ঘটনার শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ!’

কাঠুয়া ও উন্নাও নিয়ে মোদির বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। বুধবার একটি সংবাদপত্রের সাক্ষাৎকার দিয়ে মুখ খুললেন মনমোহনও। তাকে ইউপিএ সরকারের আমলে বিজেপি কটাক্ষ করে বলত ‘মৌন-মোহন সিং’। এই প্রসঙ্গ টেনে মনমোহনের পাল্টা কটাক্ষ, ‘বহুবার এই ধরনের মন্তব্য শুনেছি। এইসব শুনতে আমি অভ্যস্ত। আমি মনে করি যারা সরকারে আছেন তারা সঠিক সময়ে মুখ খুলুন। যাতে সংশ্লিষ্ট দলের অনুগামীরা দিশা দেখতে পান।’

Advertisement

২০১২ সালে নির্ভয়াকাণ্ডের পর, মনমোহন সরকার ধর্ষণ আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছিল। এবারও শাসক শিবিরকে কঠিন হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। কাঠুয়া প্রসঙ্গে মনমোহন বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি যদি শুরু থেকে কঠোর হাতে মামলাটির উপর নিজে নজরদারি করতেন, তাহলে এভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হত না, পরিস্থিতি জটিল হয়ে যেত না।’

তার মতে, শরিক বিজেপির চাপেই মেহবুবা তা করতে পারেননি। মনমোহন এখানেই থামেননি। তিনি বলেন, ‘একটি আট বছরের মেয়েকে যেভাবে কয়েক সপ্তাহ মন্দিরে আটকে ধর্ষণ করা হয়েছে, তা সত্যিই দুঃখজনক। আট বছরের শিশু যে নিজের ডান ও বাঁ হাত কোনটা বুঝে উঠতে পারেনি, সে কীভাবে হিন্দু ও মুসলিম বুঝবে!’ মনমোহনের অভিযোগ করে বলেন, সবটাই বিজেপির সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়ার চেষ্টা।

টিটিএন/আরআইপি