দেশজুড়ে

দোয়া মাহ্ফিলে ঢাক-ঢোল নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় আ.লীগ প্রার্থী

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে তার ছবি ও দলীয় নৌকা প্রতীক সম্বলিত লিফলেট নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন এলাকায় বিলি করছেন। লিফলেটটির একপাশে প্রার্থীর ছবি ও দলীয় প্রতীক এবং অপর পাশে নির্বাচনী ইশতেহার লেখা আছে। এছাড়া তার গ্রামের বাড়ি কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নেতাকর্মীদের আগমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভোটাররা।

Advertisement

এদিকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, নির্বাচন আচরণবিধি অনুসারে নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোনো প্রকার মিছিল ও শোডাউন করা যাবে না। এছাড়া প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থী নিজে বা প্রার্থীর পক্ষে কেউ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবে না। নির্বাচনী পোস্টার দেওয়ালে সাটানো যাবে না। কোনো প্রকার লিফলেট ও হ্যান্ডবিলও বিতরণ করা যাবে না।

তিনি বলেন, প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি না মানলে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। এসব ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা আইনগত ব্যবস্থা না নিলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে।

জানা যায়, বুধবার সকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ডের কানাইয়া এলাকার কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ওই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমের নামে ‘বিশেষ দোয়া মাহ্ফিলের’ আয়োজন করা হয়। এই বিশেষ দোয়া মাহফিলে দুপুর ১২টার দিকে জাহাঙ্গীর আলম মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর আলমের আগমনের আগে ও পরে ওই এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছে তার কর্মী-সমর্থকরা। অনুষ্ঠান মঞ্চের ব্যানারে ‘বিশেষ দোয়া মাহ্ফিল’ লেখা থাকলেও মঞ্চের পাশে জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থিতিতেই ব্যান্ডপার্টিকে ঢাক-ঢোল পেটাতে দেখা গেছে। এতে দোয়া মাহ্ফিলে আগতদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

Advertisement

কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, দোয়া মাহ্ফিলের আয়োজন বুধবার সকাল থেকেই শুরু হয়। স্কুলটিতে দুই শিফটে ক্লাস চলে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান হওয়ায় বুধবার সকালের শিফটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বিতীয় শিফটের শিক্ষার্থীরাও একযোগে অভিভাবকসহ স্কুলে চলে আসে। এতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। দুপুর ১২টার দিকে জাহাঙ্গীর আলম ওই মাহ্ফিলে যোগ দেন। ১২টা ১৫ মিনিটে স্কুল প্রাঙ্গণে অন্যদিনের মতো পিটি-প্যারেড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অনুষ্ঠানের কারণে আজ হয়নি। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারেনি দ্বিতীয় শিফটের শিশু শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হয়েছে।

প্রবীণ আলী আকবর (৬০) জানান, মিলাদের কথা শুইনা নাতিরে নিয়া আইলাম। অহোন দেহি ঢোল পেটায়।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, এ খবরটি তিনিও পেয়েছেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে খোঁজ খবর নিতে বলেছেন। একটি তদন্তকারীদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলেও তিনি জানান।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, এ ধরনের একটি সভার কথা তিনিও খবর পেয়েছেন। শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Advertisement

মো.আমিনুল ইসলাম/আরএ/এমএস