জাতীয়

উপযুক্ত প্রাথমিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুঝুঁকিতে দুর্ঘটনার রোগীরা!

চিকিৎসকদের গাফিলতির কারণে ঢাকার বাইরে সড়ক দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির শিকার রোগীরা অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন। দুর্ঘটনায় যে কোনো অঙ্গহানির পর প্রাথমিকভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদানের নিয়ম। কিন্তু সেটি না করে রাজধানীসহ দূর-দূরান্তের বড় বড় হাসপাতালে রেফার করা হয়। ফলে পথিমধ্যে রোগীর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়!

Advertisement

আবার প্রাণে বেঁচে গেলেও সামান্য ভুলের কারণে পরবর্তীতে সুচিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হয়। গতকাল (মঙ্গলবার) গোপালগঞ্জে বাসের পাশ ঘেঁষে একটি ট্রাক যাওয়ার সময় হাত হারান খালিদ হাসান হৃদয় (২০)। শরীর থেকে হাতটি বিচ্ছিন্ন হয়ে সড়কে পড়ে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় দ্রুত তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে হৃদয়কে উপযুক্ত প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিচ্ছিন্ন হাতের রক্তনালীগুলো বেঁধে না দিয়ে চিকিৎসকরা শুধুমাত্র ব্যান্ডেজ করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ভাগ্য সহায় থাকায় রাস্তায় অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হয়নি।

বর্তমানে হৃদয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা গত দিনের তুলনায় স্থিতিশীল।

Advertisement

বুধবার দুপুরে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে ঢামেক অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের এক শ্রেণির চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে সুচিকিৎসা না দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করেন।

গোপালগঞ্জে হাত হারানো হৃদয়ের প্রাথমিক চিকিৎসার উদাহরণ তুলে তিনি বলেন, মাত্র ১০ মিনিটেরও কম সময়ে হৃদয়ের বিচ্ছিন্ন হাতের রক্তনালিগুলো বেঁধে দিয়ে চিকিৎসকরা রেফার করতে পারতেন। কিন্তু শুধুমাত্র ব্যান্ডেজ দিয়ে তারা ঢামেক হাসপাতালে রেফার করেন। যা অত্যন্ত অমানবিক। পথে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যুও হতে পারত।

‘অজ্ঞতা, অনীহা ও কিংবা দায়িত্ব এড়াতে ঢাকার বাইরের চিকিৎসকরা এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটাচ্ছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটর করা প্রয়োজন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ডা. শামসুজ্জামান বলেন, গতকালের তুলনায় আজ হৃদয়ের অবস্থা অনেকটা ভালো। তার হাত বিচ্ছিন্ন হলেও মাথায় বড় ধরনের আঘাত না থাকায় ঝুঁকিমুক্ত।

Advertisement

গত ৩ এপ্রিল দুই বাসের রেষারেষির মধ্যে পড়ে ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেনের (২১) হাত কাটা পড়ে। ১৩ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হার মানেন তিনি। গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজীব না ফেরার দেশে চলে যান।

বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় সরেজমিন ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন হৃদয়ের শয্যাপাশে বসে আছেন তার মা। বেডে আধশোয়া অবস্থায় থাকা হৃদয়ের পেটের নিচ থেকে গলা পর্যন্ত লাল একটি গামছা দিয়ে ঢাকা। চোখে ও মুখে কাটা আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট।

মঙ্গলবার গোপালগঞ্জে বাসের পাশ ঘেঁষে একটি ট্রাক যাওয়ার সময় হাত হারান হৃদয়। কাটা পড়া হাতটি যেন দেখা না যায় তাই ঢেকে রাখা। মা পরম স্নেহে একটি সিদ্ধ ডিম ভেঙ্গে অল্প অল্প করে ছেলেকে খাওয়াচ্ছেন। পাশে বসা এক তরুণী ছুরি হাতে মাল্টা কাটছিলেন। ডিম ও মাল্টার জুস খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে হৃদয় ঘুমিয়ে পড়েন।

হৃদয়ের মা জানান, সে জেনে গেছে তার হাতটি নেই। মানসিকভাবে সে ভেঙ্গে পড়েনি। চিকিৎসকরা হাইডোজের ওষুধ দিয়েছে। তাই কিছুক্ষণ জেগে ঘুমিয়ে পড়ে হৃদয়।

হৃদয় টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের পরিবহন শ্রমিক। তার বাবার নাম রবিউল ইসলাম এবং মা শাহিদা বেগম। বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের পুলিশ লাইন এলাকায়। বাবা টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস বাসের সুপারভাইজার। হৃদয়ও ওই বাসের সহকারী।

মঙ্গলবার টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস পরিবহনের বাসে কাজ শেষে হৃদয় একটি বাসে করে গোপালগঞ্জে যাচ্ছিল। বাসে উঠে জানালার পাশে বসে সে। তার হাতটি জানালার পাশে ছিল। গোপালগঞ্জের বেতগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিপরীত থেকে আসা একটি ট্রাক বাসটি ঘেঁষে যাওয়ার সময় হৃদয়ের ডান হাত কাটা পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় হৃদয়কে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান হয়।

এমইউ/এমএআর/এমএস