বয়স মাত্র চৌদ্দ’র কোটা পেরিয়েছে। মায়াবী অবয়বের অধিকারী ছিল মেয়েটি। তারও স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে ঘর বাঁধার। কিন্তু দারিদ্র্যের কষাঘাতে পড়ে অকালে বাল্যবিয়ের কবলে পড়তে হলো আফসানা আক্তার পপিকে।
Advertisement
মঙ্গলবার রাতে শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের কপাটিয়া পাড়া গ্রামের স্বামীর বাড়ি থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিশোরীর স্বজনদের দাবি তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে স্বামীর বাড়ির লোকজন।
নিহত আফসানা আক্তার পপি মাওনা ইউনিয়নের বদনীভাঙ্গা গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। সে মুলাইদ এলাকার হাজী ছোট কলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত ৯ ফেব্রুয়ারি নিজের অমতে পরিবারের সদস্যরা জোর করে তাকে বিয়ে দেন। স্বামী তোফাজ্জল হোসেন একজন কারখানা শ্রমিক।
কিশোরীর স্বজনরা জানান, আফসানার বাবা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। আফসানার বয়স যখন ছয় বছর তখনই মায়ের সঙ্গে বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে আফসানা তার বাবার সাথেই বসবাস করছিল। এদিকে আফসানার মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
Advertisement
আফসানা অনেক মেধাবী হওয়ায় বাবা তাকে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। কিন্তু সেখানে পাঠদানরত অবস্থায় তার সৎ মা গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে জোর করে বিয়ে দেন। স্থানীয় কাজী বাল্যবিয়ের রেজিস্ট্রি করার ব্যাপারে অপরাগতা প্রকাশ করলে তারা আদালতের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। তবে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় আফসানা বিয়ের পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। সে সবসময় কান্নকাটি করত।
আফসানার স্বামী তোফাজ্জল হোসেন জানান, তিনি শারিরীক ভাবে অসুস্থ থাকায় মঙ্গলবার বাড়িতে ছিলেন। এ সময় দুপুরের দিকে আফসানা তার বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য আবদার করে। তবে তিনি নিষেধ করলে সে নিজ ঘরে চলে যায়। বিকেলের দিকে তার কোনো সাড়া না পাওয়ায় ঘরে গিয়ে ঝুলন্ত মরদেহ দেখা যায়। এ সময় প্রতিবেশীদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে শ্রীপুর থানায় সংবাদ দেয়া হয়।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কায়সার আহমেদ জানান, সংবাদ পেয়ে কিশোরীর স্বামীর বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে বলা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/পিআর
Advertisement