মতামত

আর কত রাজীবকে হারাতে হবে?

রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানোর ১৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাজীব। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা রাজীবের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু অত্যন্ত বেদনার। রাজধানীর বেপরোয়া গতির যানবাহন কতটা জীবনসংহারী সে কথাটিও যেন বলে দেয় একটি তরতাজা প্রাণের অকালে চলে যাওয়া। এ ধরনের মৃত্যু কোনো অবস্থায়ই কাম্য হতে পারে না।

Advertisement

অত্যন্ত দুঃখজনক হচ্ছে একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই ঘটছে আরো একটি ঘটনা। রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব হাসান চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই ঘটে আরো একটি দুর্ঘটনা। ওই ঘটনায় বেপরোয়া বাসের চাপে পা থেঁতলে গেল এক পথচারী নারীর। রাজধানীর বাসচলাচল কতটা বিপদজনক এবং বেপরোয়া সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। বার বার নানা দুর্ঘটনায়ও কারো টনক নড়ছে না। কিন্তু জননিরাপত্তার স্বার্থে এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না।

আনন্দ সিনেমা হলের সামনে বাস থেমে যাত্রী ওঠা-নামা করে। সেখান সড়কে উঁচু বিভাজক আছে। ওই বিভাজকের ওপর যাত্রীরা দাঁড়ান। সকাল নয়টার দিকে এক নারী সড়ক থেকে উঁচু বিভাজকের ওপর উঠতে যাচ্ছিলেন। এ সময় বেপরোয়া গতির নিউ ভিশন পরিবহনের একটি বাস সড়ক বিভাজক ঘেঁষে এগিয়ে আসে। বিভাজক ও বাসের মাঝে ওই নারীর ডান পা চাপা খায়। এতে তাঁর ডান পায়ের হাঁটু সংলগ্ন অংশ থেঁতলে যায়। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

রাজীবের হাত হারানোর ঘটনাটি ঘটে গত গত ৩ এপ্রিল। ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরের দিক থেকে ফার্মগেটমুখী একটি দ্বিতল বিআরটিসি বাস সার্ক ফোয়ারার কাছে পান্থকুঞ্জের পাশে সিগনালে থেমে ছিল। পরে একই দিক থেকে আসা স্বজন পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে এসে দোতলা বাসের পাশের ফাঁক দিয়ে ঢুকে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় যাত্রী রাজিব হাসানের ডান হাত দ্বিতল বাসের সঙ্গে লেগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হাতটি দ্বিতল বাসের সঙ্গে ঝুলছিল। আশপাশের লোকজন তাৎক্ষণিক রাজীবকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাজীব।

Advertisement

রাজধানীতে বাস চলাচল কতটা বেপরোয়া তার উদাহরণ যেন এই ঘটনাগুলো। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনার বলি হচ্ছে অনেক মানুষ। এর অন্যতম কারণ যানবাহনের বেপরোয়া গতি। খোদ রাজধানীতে যেখানে যানজট লেগেই আছে সেখানেও সামান্য সুযোগ পেলেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে চালকরা। যাত্রী-ওঠা নামার অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণেই মূলত এই পাল্টাপাল্টি। এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। অপরাধীর শাস্তি না হলে অপরাধ বন্ধ করা কঠিন। দুটি ঘটনায় অভিযুক্ত চালকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা যাবে না। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় পতিত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক কথা হয়েছে। এবার সময় এসেছে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার। গণপরিবহন নিশ্চিত এবং যাত্রীস্বার্থ রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো শৈথিল্য কাম্য নয়।

এইচআর/পিআর

Advertisement