জাতীয়

দুর্ঘটনার দায় নিজেরও

শত চেষ্টাতেও বাঁচানো গেল না সড়ক দুর্ঘটনায় আহত তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবকে। যে হাতে জীবনের কথা লিখতেন সে হাত হারিয়েছিলেন মরণঘাতী দুটি বাসের চাপায় পড়ে। শেষ পর্যন্ত জীবন প্রদীপ একেবারে নিভেই গেল টগবগে এ যুবকের। রাজীবের মৃত্যুতে শোকের ছাঁয়া নেমেছে গোটা দেশে। একজন তরুণের এমন করুণ মৃত্যু সবাইকে যেন আরেকবার সতর্ক করে দিল।

Advertisement

ওই দুই বাস চালকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির দাবি উঠেছে সর্বমহল থেকে। অপেশাদার ও অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই প্রতি বছর হাজার হাজার প্রাণ যাচ্ছে নির্মম দুর্ঘটনায়। আবার লাখ লাখ ফিটনেসবিহীন গাড়িও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। খানা-খন্দ ভরা সড়ক আর তীব্র যানজটও দুর্ঘটনা বাড়িয়ে তুলছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।

এতসব কারণের মধ্যে মানুষ যেন তার নিজের দায়কে ভুলতেই বসেছেন। দুর্ঘটনা এড়াতে নিজেরও যে সতর্ক হওয়ার বিষয় আছে এবং সাবধানতাই যে অকালে ঝরে যাওয়া থেকে প্রাণ বাঁচাতে পারে সে ব্যাপারে উদাসীন মানুষ। ফাঁকা রাস্তা, তবুও দুর্ঘটনা! রেল লাইনেও দুর্ঘটনা!

কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনার খবর এখন হরহামেশাই শোনা যায়। চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনার খবরও কম নয়। অথচ সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করলেই এসব দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। এক হিসেবে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ১৯৬৪টি দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত হয়েছে ২৮০৪ জন যা সমস্ত দুর্ঘটনার প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি।

Advertisement

নিয়ম বহির্ভূতভাবে রাস্তা পারাপার, রাস্তায় ধান-পাট শুকানো, হাটবাজার বসানো, রাস্তার পাশে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পথচারীদের সংখ্যাই বেশি।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বোধের অভাব রয়েছে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘ যে টার্গেট দিয়েছে, তা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয় বলে সংগঠনটি মনে করে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সড়ক দুর্ঘটনারোধে আন্দোলন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বলেন, সাধারণত চালকের ভুলের কারণেই দুর্ঘটনা হয়। কিন্তু দুর্ঘটনায় অর্ধেক যখন পথচারী নিহত হন, তখন নতুন করে ভাবতে হয়। অনেক পথচারী নিজের অসতর্কতার কারণেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

তিনি বলেন, নাগরিককে সতর্ক করে তোলার ব্যবস্থা রাষ্ট্র বা সমাজ নেয়নি। কোনো প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠেনি। নৈতিক শিক্ষার অভাব থাকার কারণেও পথচারীর অনেকে বেপরোয়া চলাচল করে থাকে। এর দায় তো একজন পথচারী কোনোভাবে এড়াতে পারেন না।

Advertisement

এএসএস/ওআর/এমএস