‘আমি কে? আন্টি। আমি কি করি? জব করো। বলতো আমি কোন আন্টি? হ্যাপি আন্টি।’
Advertisement
আমার নাম জাহানার বেগম। হ্যাপি আমার ছোট বোন। আমাকে চিনতে না পারায় আমি হেসে বলি ‘ওহ বড় আন্টিকে চেনো না, শুধু হ্যাপি আন্টিই তোমার আপন তাই না।’ ওর মনের অবস্থা জানার জন্যেই আমি এসব প্রশ্ন করছিলাম। এ সময় সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চোখ বড় বড় করে শুধু এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল। বাম হাত দিয়ে কাটা ডান হাতের ব্যান্ডেজে হাত বুলাচ্ছিল। হাত কাটা দেখে মানসিকভাবে বিপর্য়স্ত হয়ে পড়েছিল রাজীব।
মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বড় খালা জাহানারা বেগম ঠিক এভাবেই ঢামেক হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ভেতরে রাজীবের সঙ্গে সর্বশেষ কথোপকথন বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, কখনও ভাবতে পারিনি রাজীব মারা যাবে। সর্বশেষ আইসি্ইউতে যে দিন নেয়া হয় সেদিনও রাজীব স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলেছে। তাকে নিজ হাতে জুস খাইয়েছি। আইসিইউতে নেয়ার আগে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজীব বেঁচে যাবেন বলে তারা ধরে নিয়েছিলাম। সেদিন সকালেই হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন রাজীবকে পরের দিন কেবিন থেকে ওয়ার্ডে দিবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাতেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
Advertisement
কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহানারা বেগম বলেন, বাবা-মা হারানো রাজীব ছোট দুই ভাই মেহেদি ও হাসানকে নিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখতেন। তিতুমীর কলেজে নিজের পড়াশোনা, টিউশনি ও কম্পিউটারে গ্রাফিকস ও টাইপিংসহ বিভিন্ন কাজ করে সংসার চালাতেন। তার কষ্টের টাকায় ছোট দুই ভাই হাফেজ হয়েছে। এখন আবার বাংলাতে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে পড়ছে। পড়াশোনা শেষে নিজের চাকরি ও পরবর্তীতে দুই ভাই চাকরি বা ব্যবসা করলে সংসারে সুখ আসবে বলে অনেকের কাছে স্বপ্নের কথা বলতেন। যে ড্রাইভারদের কারণে রাজীবের মৃত্যু হয়েছে তাদের শুধু রাজীবের মৃত্যুর জন্যই নয়, তার দুই ভাইয়ের জীবন অনিশ্চয়তায় ফেলে প্রকারান্তরে খুন করেছেন বলেও মন্তব্য করেন জাহানারা বেগম।
তিনি বলেন, বাড়িতে দাফন শেষে ওই দুটি শিশু ঢাকায় এসে কোথায় কার কাছে থাকবে, পড়াশোনার খরচ কোথা থেকে আসবে তা অনিশ্চিত।
তিনি বলেন, সরকার যদি এ দুটি শিশুর দায়িত্ব নেয় তবে তাদের জীবন নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। তিনি সরকারের কাছে রাজীবের হত্যাকারী ঘাতক বাস চালকদের ফাঁসি দাবি করেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জাহানারা বেগম বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছে।
Advertisement
এমইউ/এএইচ/এমএস