দেশজুড়ে

রংপুর বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সেবা এখন স্বপ্নের মতো

রংপুর বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের চিরচেনা রূপ এখন বদলে গেছে। আগের মতো দালালের দৌরাত্ম্য নেই, নেই ভোগান্তি-হয়রানি।

Advertisement

জনভোগান্তি কমাতে নাগরিক সেবা-সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যানার ও সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে রীতিমতো দালালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন রংপুর বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সহকারী পচিালক শামীম আহমদ।

দালালের খপ্পরে না পড়ে ভোগান্তি ও হয়রানি ছাড়াই পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এরই ফলশ্রুতিতে ই-সেবা প্রদানকারী দপ্তর হিসেবে ২০১৮ সালে রংপুর জেলার শ্রেষ্ঠ ও বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

সরজমিনে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসে মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই নিরপত্তা প্রহরীর কক্ষের সামনে ও আবেদনপত্র জমার কাউন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে কাগজে লেখা ‘অফিসে কেউ যদি আপনার কাছে অবৈধ (অর্থ) দাবি করে তাহলে তা সহকারী পরিচালককে অবহিত করুন। রুম নং ২০১। সেই সঙ্গে দেয়া হয়েছে পরিচালকের মুঠোফোন নম্বর।

Advertisement

এছাড়াও ভবনের দেয়ালে লাগানো হয়েছে নাগরিক সেবা-সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যানার ও সতর্কমূলক বিজ্ঞপ্তি। সেখানে বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘দালাল ও প্রতারক চক্র থেকে সাবধান। আপনার সমস্যায় আমি। সমস্যা জানতে চাই, সমাধান করতে চাই।’

মূল ফটকের পর পাসপোর্ট ভবনের প্রবেশদ্বারে রাখা হয়েছে অভিযোগ ও পরামর্শ বক্স। রয়েছে নোটিশ বোর্ড। সেখানে পূরণ করা পাসপোর্টের নমুনা কপিসহ বিভিন্ন পরামর্শ ও সচেতনতামূলক পোস্টার লাগানো রয়েছে। কেউ বুঝতে না পারলে তাদের জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বে রয়েছেন দু’জন কর্মচারী।

দেখা যায়, অফিস চত্বর থেকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে দালালদের। সেই সঙ্গে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবামূলক বিভিন্ন লিফলেট বিতরণসহ ওই অফিসের সব কর্মকর্তা কর্মচারীকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এছাড়া কেউ অতিরিক্ত টাকা চাইলে তা সহকারী পরিচালককে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। অফিসের ভেতরে কোলাহলমুক্ত শান্ত পরিবেশ। শান্ত চিত্তে সেবা গ্রহণ করছেন জনসাধারণ। সবাই নিজের কাজ নিজেই করছেন। সেবাগ্রহীতাদের জন্য রয়েছে বসার সু-ব্যবস্থা। আর কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেবাগ্রহীতারা যোগাযোগ করছেন অফিসের সহকারী পরিচালক শামীম আহমেদের সঙ্গে। প্রয়োজন মতো প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি নিজেই।

পাসপোর্ট করতে আসা নগরীর রাজেন্দ্রপুর গ্রামের অপূর্ব চন্দ্র বলেন, চিকিৎসা করাতে তিনি ভারতে যাবার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছেন। এখানকার পরিবেশ ও কোনো রকম উৎকোচ ছাড়াই পাসপোর্টের কাগজ জমা দিতে পারায় তিনি সন্তুষ্ট।

Advertisement

তিনি বলেন, অনেকের মুখে শুনেছি পাসপোর্ট করতে ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। অতিরিক্ত টাকাও খরচ হয়। কিন্তু এখানে আসার পর ধারণা বদলে গেছে।

সম্প্রতি পাসপোর্ট করেছেন নগরীর কেরানিপাড়ার মোস্তফা সাব্বির। তিনি বলেন, নোটিশ বোর্ডে লাগানো নমুনা কপি দেখে নিজেই ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছি। নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত কোনো টাকাই লাগেনি। দালালের খপ্পরে না পড়ে একটু সচেতন হলেই ভোগান্তি-হয়রানি ছাড়াই পাসপোর্ট পাওয়া যাবে বলে তিনি দাবি করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময়ে পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যুক্ত দালাল চক্রের সদস্যরা এখন শহরের বিভিন্ন অফিস-আদালতে ঘোরাঘুরি করেন। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের সামনে ও কাঁচারি বাজার এলাকায় এদের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। কেউ পাসপোর্ট করবেন জানতে পারলে তাদেরকে নানাভাবে ফুঁসলিয়ে পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই চক্রটি।

এ বিষয়ে রংপুর পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক শামীম আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসে দালালের উপদ্রব নিয়ে একসময় অনেক সমালোচনা ছিল। গত বছরের অক্টোবরে যোগদানের পর দালালদের বিতাড়িত করেছি। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগে এক কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছি।

তিনি বলেন, কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই দ্রুত সময়ে জণসাধারণকে পাসপোর্ট সেবা প্রদানের লক্ষে নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে ই-সেবা প্রদানকারী দপ্তর হিসেবে ২০১৮ সালে রংপুর জেলার শ্রেষ্ঠ ও বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

শামীম আহমদ বলেন, পাসপোর্ট করতে অতিরিক্ত কোনো টাকা লাগে না-এমন নির্দেশনা দেয়ার পরও কিছু ব্যক্তি শহরের বিভিন্ন জায়গায় দালালের খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছেন। এর থেকে রেহাই পেতে দালালদের খপ্পরে না পড়ে সরাসরি অফিসে গিয়ে নির্দেশনা অনুযায়ী পাসপোর্টের কাগজপত্র জমা দিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এমএএস/এমএস