মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে পুলিশ মৃত রাজীব হোসেনের সুরুতহাল রিপোর্ট লিখছে। টেবিলের সামনে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুই কিশোর। মেহেদি হাসান ও আবদুল্লাহ নামের ওই দুই কিশোর রজীবের ছোট ভাই। ওরা রাজধানীর মীরহাজিরবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পাশ করে এখন ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
Advertisement
বড় ভাই রাজীবই ছিল ওদের অভিভাবক। রাজীব নিজের পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার খরচ জোগাতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টিউশনি, গ্রাফিকস ক্লাস ও কম্পিউটার কম্পোজের কাজ করতেন। সেই অভিভাবককে হারিয়ে ওরা বাকরুদ্ধ।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলে, ভাইয়া তো নেই, আমাদের পড়াশোনা কি বন্ধ হয়ে যাবে? ভাইয়ার লাশ দাফন করে বাড়ি থেকে ফিরে কোথায় উঠবো? কী খাবো? পড়াশোনা চালাতে পারবো কি-না জানি না।
তারা দুইভাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
Advertisement
সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা রাজীবের মৃত্যু হয়। তার মরদেহ এখনও হাসপাতালেই রাখা হয়েছে।
রাজীবের খালা হ্যাপী আকতার জাগো নিউজকে জানান, হাসপাতালে সব প্রক্রিয়া শেষ করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজীবের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে। সেখানে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হবে তাকে।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। বাসটি হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে গা ঘেঁষে অতিক্রম করে।
এ সময় দুই বাসের প্রবল চাপে গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাজীবের ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এতে তার মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত লাগে। দুর্ঘটনার পর তাকে প্রথমে শমরিতা হাসপাতালে ও পরে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। গত মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) ভোর পৌনে ৪টায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে রাজীব। এরপর ওই দিন সকাল ৮টায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
Advertisement
এমউই/এমবিআর/পিআর