জাতীয়

কয়লার দূষণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে

সুন্দরবনে পশুর চ্যানেলে কয়লা বোঝাই জাহাজ ডুবির ঘটনায় সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

Advertisement

এতে তারা বলেন, কয়লার দূষণ পানিতে ছড়িয়ে পড়লে নদীর পানি-মাটি-মৎস্য সম্পদ ও প্রাণীকুলসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।

সুন্দরবনে পশুর চ্যানেলে কয়লা বোঝাই জাহাজ ডুবির ঘটনায় সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাপার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া এলাকায় পশুর চ্যানেলে ডুবো চরে ৭৭৫ টন কয়লা বোঝাই লাইটার জাহাজ এমভি বিলাস নামে একটি জাহাজ ডুবে গেছে। জাহাজ ডুবির সংবাদে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং ডুবে যাওয়া জাহাজটিকে দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কয়লার দূষণ পানিতে ছড়িয়ে পড়লে নদীর পানি-মাটি-মৎস সম্পদ ও প্রাণীকুলসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। তাই দূষণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে যতদ্রুত সম্ভব ডুবে যাওয়া জাহাজটিকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হোক।

বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, সুন্দরবনের পাশে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরকার যে সকল বৃহৎ শিল্প কারখানার অনুমোদন দিয়েছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে দৈনিক এ ধরনের আরও বড় বড় তেল ও কয়লাবাহী জাহাজ এই নৌপথ দিয়ে চলবে। এতে এই ধরনের দূর্ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা।

Advertisement

এদিকে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সোমবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশকে বাঁচায় যে সুন্দরবন তাকেই এই সরকার দেশি-বিদেশি লুন্ঠনকারী মুনাফাখোর ও দখলদারদের হাতে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছে। ভারত সরকার সে দেশের বিধি ভঙ্গ করে (বনভূমির ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা যায় না) এখানে নির্মাণ করছে বিরাট ধ্বংসযজ্ঞের রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর বাংলাদেশের সরকার দেশের পরিবেশ আইন ভঙ্গ করে সুন্দরবনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বলে চিহ্নিত ১০ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে শতশত ভয়াবহ দূষণকারী প্রকল্প অনুমোদন করে বনগ্রাসী, ভূমিগ্রাসী দস্যুদের হাতে তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশের রক্ষাকবচ সুন্দরবন। তাদের সুবিধার্থে লাল বা ভয়ংকর পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্পকে সবুজ প্রকল্প বলে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ধ্বংস মানে-শুধু দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় নয়, প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া। তাই সুন্দরবন রক্ষার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জাগরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকার আশু পরিবর্তন দাবি করি এবং আগামী ১৯ এপ্রিল সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ এবং রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবন বিনাশী সব প্রকল্প বাতিলের দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য সবার প্রতি আহবান জানাই।’

অপরদিকে বনের ভিতরে আবারও কয়লাবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতৃবৃন্দ।

এক বিবৃতিতে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম বলেন, সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে কয়লাসহ পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল যে ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর ফলে সুন্দরবন যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে এসেছি। এটি উপেক্ষা করে বারবার কয়লাবাহীসহ পরিবেশ দূষণকারী পণ্য নিয়ে জাহাজ চলাচল করছে।

Advertisement

গত ১৪ এপ্রিল সুন্দরবনের ভিতরে মংলা সমুদ্র বন্দরে পশুর চ্যানেলে হাড়বাড়িয়া এলাকায় ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এম ভি বিলাস নামের লাইটার জাহাজ ডোবার মধ্যদিয়ে এই আশঙ্কা আবারও সত্যে পরিণত হয়েছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে নদী থেকে কয়লা উদ্ধারে ও দূষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থার দাবি জানান।

এফএইচএস/এসআর/পিআর