স্বাস্থ্য

হাট-বাজার নয়, আইসিইউ এর করিডোর!

ছোট্ট এক চিলতে বারান্দা। শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশুর শোরগোলে মুখরিত। কেউ বেঞ্চে বসে বসে ঝিমুচ্ছে। কেউবা মাদুর বিছিয়ে ঘুমাচ্ছেন কিংবা মোবাইল ফোনে কথা বলছে। আবার কেউ উদ্বিগ্ন চেহারায় রক্ত, ওষুধ হাতে এদিক-ওদিক ছুটছে। ডাক পড়লেই ছুটে যাচ্ছে ডাক্তারের দিকে। দেখলে মনে হতে পারে এটি ব্যস্ত কোনো হাট-বাজার। কেউ হয়তো ভুল করে বাস কিংবা রেলস্টেশন ভাবতে পারেন। কিন্তু দরজার ওপর সাইনবোর্ডটি দেখলে সহজেই বোঝা যায় এটি হাটবাজার বা রেলস্টেশন নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ-এর করিডোর। সোমবার সকালে সরেজমিন পরিদর্শনকালে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

Advertisement

রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ঢামেকের আইসিইউ’র বাইরে করিডোরের এ দৃশ্য নিত্যদিনের। আইসিইউ চিকিৎসাধীন ও পোস্ট অপারেটিভের রোগীর স্বজনরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা করিডোরে অপেক্ষা করেন।

তারা জানান, যেসব ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয় না সেসব প্রয়োজনীয় দামি ওষুধ-ইনজেকশন চিকিৎসকের চাহিদা অনুসারে যখন তখন বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতেও সতর্ক থাকতে হয়। ডাক্তারের কখন কোনটা লাগে সে অপেক্ষায় থাকতে হয়।

জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন এনেসথেসিয়া বিভাগীয় প্রধান শাহজাহান নুরুস সামাদ চৌধুরীর হাত ধরে মাত্র ৪ শয্যার আইসিইউ চালু হয়। পরবর্তীতে পর্যাক্রমে ৮ শয্যা, ১০ শয্যা, ২০ শয্যা ও সর্বশেষ মাস তিনেক আগে ৩২ শয্যার আইসিইউ চালু হয়। এনেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেন জানান, ঢামেকের আইসিইউতে চিকিৎসা খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় বেডের চাহিদা খুব বেশি। একটা সময় ঢামেক আইসিইউতে ডাক্তার ও নার্সের সঙ্কট থাকলেও বর্তমানে এর অবস্থা অনেক ভালো। এছাড়া রোগীদের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ওষুধ বিনামূল্যে হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।

Advertisement

চাহিদা বেশি হওয়ায় কীভাবে আইসিইউর আসন বিন্যাস করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমতো অস্ত্রোপচার পরবর্তীতে রোগীদের মধ্যে যাদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয় তাদের দেয়া হয়। দ্বিতীয়তো হাসপাতালে অস্ত্রোপচারকালে কোনো রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাদের আইসিইউ বেড দেয়া হয়। তৃতীয়তো হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে যাদের আইসিইউ বেড লাগে এবং সর্বশেষ চিকিৎসকরা কোনো রোগীর প্রাণ রক্ষার্থে (হাসপাতালে ভর্তি কিংবা বাইরের থেকে আসা) বেড দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিইউ-এর একাধিক চিকিৎসক জানান, ঢামেক আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীর আর্থিক অবস্থা দুর্বল। এদের অধিকাংশই প্রথমে রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করান। কয়েকদিন ভর্তি রেখে হাসপাতালের বিল দেখে চক্ষু চড়ক গাছ হয়। পরে কোনোভাবে ঢামেক আইসিইউর বেড ম্যানেজ করে ভর্তি হন। এসব রোগীর অনেকেই ঢাকা শহরে বাসা-বাড়ি নেই। তাদের অনেকেই করিডোরে দিনরাত কাটান বলে ওই চিকিৎসক জানান।

এমইউ/এমআরএম/এমএস

Advertisement