চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর-হাটহাজারী সড়কের বিবিরহাট অংশে ওয়াসার পাইপলাইন বসানোর কাজ করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই রাস্তার মাঝখানে বেশ কিছু জায়গা খনন করা হয়েছে। এখন দিনের ব্যস্ত সময়ে সেই ভাঙ্গা রাস্তায় নামকাওয়াস্তে ইটের শুড়কী ফেলে করা হচ্ছে কার্পেটিং। আর এতেই নগরীর ব্যস্ত সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা যানজটের।
Advertisement
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মুরাদপুর-হাটহাজারী সড়কের বিবিরহাট অংশের দুইপাশে আটকা পড়েছে শতশত গাড়ি। দিন-দুপুরে হাজার হাজার মানুষকে রাস্তায় আটকে রেখে করা হচ্ছে কার্পেটিং। যদিও এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো মসলাপাতির ব্যবহার চোখে পড়লো না। নামকাওয়াস্তে ইটের টুকরোর উপর ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিটুমিন।
এ নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে এ রুটে যাতায়াতকারী যাত্রী ও চালকদের। আলকাছ মির্জা নামের এক টেম্পু যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, `এই অমানুষগুলো রাতে এসব কাজ করতে পারে না? দিনের মধ্য দুপুরে গরমের মধ্যে শতশত গাড়ি ভর্তি মানুষ আটকে কোনো কাজ করছে এরা। এসব দেখার কি কেউ নেই?’
বিশ্ববিদ্যালয়-নিউ মার্কেট রুটে চলাচলকারী তরী পরিবহনের চালক মামুন জানান, গত এক ঘণ্টা যাবত মুরাদপুর রেলগেইট এলাকায় আটকে আছেন তিনি। কিন্তু রাস্তা বন্ধ থাকায় যেতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠা যাত্রীরা তাকেই গালি-গালাজ করছেন। অথচ এখানে তার কিছু করার নেই।
Advertisement
এদিকে সড়কে এমন বেহাল দশায় মানুষের যখন দিশেহারা অবস্থা তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগড় ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের লোকবল কম। এ রুটে প্রায় যানজট লেগে থাকে। মুরাদপুর ও অক্সিজেনে আমাদের লোকজন থাকলেও মাঝখানে লোক দেয়া সম্ভব হয় না।’
মুরাদপুর রেলগেইট এলাকায় কার্পেটিংয়ের কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। তাদের একজন সাবু মৈত্র। তিনি জানান, কন্ট্রাকটর তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে কোথায় গেছেন জানেন না। যেভাবে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন সেভাবেই কাজ করছেন তারা।
শুধু ইটের টুকরোয় বিটুমিন দিয়েই রাস্তার কাজ শেষ করবে কি-না, জানতে চাইলে সাবুর জবাব, ‘কন্ট্রাকটর এভাবেই কাজ চালিয়ে নিতে বলেছে।’
Advertisement
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই পুরো সড়কজুড়ে খানাখন্দে ভরা। আর ক'দিন পরেই বৃষ্টি শুরু হবে। ইটের টুকরোয় বিটুমিনের এই প্রলেপ আরও বেশি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এতে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুতে মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য পাইপলাইন বসাতে চট্টগ্রাম ওয়াসা মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত সড়কটি খুঁড়ে ফেলে। এতে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টির হয়। তখন থেকেই যানবাহন চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বলছে, সড়কে প্রায় জায়গায় ওয়াসার পাইপলাইন বসে গেছে। তবে এখনো কিছু কিছু অংশে কাজ হচ্ছে। ওয়াসা সড়কটি বুঝিয়ে দিলে এ বছরের এপ্রিলের মধ্যেই সড়কটি মেরামত কাজ সম্পূর্ণ শেষ হবে।
উত্তর চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির মানুষদের যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত হয়। কিন্তু সাড়ে চার কিলোমিটারের সড়কটিতে যাতায়াতে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের কাটাতে হচ্ছে গাড়িতে। এছাড়া ধুলোবালির কারণে সড়কের আশপাশের ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
আবু আজাদ/এসআর/এমএস