কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে দলটির নেতাদের মিথ্যাচার না করার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘বেগম জিয়াকে সর্বোত্তম চিকিৎসা করা হচ্ছে।’ সোমবার সচিবালয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
Advertisement
কারাবন্দী থাকা অবস্থায় জেল কোডের বাইরে কাউকে চিকিৎসা দেয়া যায় না জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বেগম জিয়ার সর্বোত্তম চিকিৎসা করা হচ্ছে ও করা হবে। তার যেকোন অসুবিধা দেখা হবে। তবে জেল কোডের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কোনো অবহেলা করা হচ্ছে না, করার প্রশ্নই উঠে না।’ ‘তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা, একটি দলের চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার প্রতি সব সময়ই আমাদের সদয় দৃষ্টিভঙ্গি আছে। তিনি বন্দী অবস্থায় কষ্ট না পান, চিকিৎসা ক্ষেত্রে কষ্ট না পান সেটা আমরা সরকার লক্ষ্য রাখছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে বলব খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে অহেতুক মিথ্যাচার করবেন না। অহেতুক দোষারোপ করবেন না সরকারকে। আমাদের যা করণীয় তা আমরা করছি।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘বিএনপি অহেতুক রাজনীতি করে, সব বিষয় নিয়ে রাজনীতি করে। সবক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না, গুজব ছড়াবেন না দয়া করে। বেগম জিয়া নিজেই চিকিৎসার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে) এসেছেন। চিকিৎসা নিয়েছেন, ওষুধ খাচ্ছেন। তিনি ভালো আছেন।’
বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির নেতাদের আইন-আদালতের দিতে যত্মবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে নাসিম বলেন, ‘আইনজীবীদের প্রস্তুত করুন। তাকে কেন তারা জেলে রেখেছে? আইন-আদালতের মাধ্যমে বের করে নিয়ে আসে না কেন? এই কাজটা তারা করুক।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ তিনি (খালেদা জিয়া) দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ কারাগারে আছে। আমরা কেউ না চাইলেও আদালতের নির্দেশে তিনি কারাগারে আছেন। আশা করি তিনি আদালতের নির্দেশেই মুক্তি পাবেন।’
‘যেহেতু তিনি রাষ্ট্রের হেফাজতেই কারাগারে আছেন এজন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাকে নিয়মিত ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা ও তাকে সুস্থ রাখা। কিন্তু একটি বিষয় অত্যন্ত দুঃখজনক, মাঝে মধ্যেই গতকালও দেখলাম বিএনপি নেতারা বলেছেন, আমাদের সরকারি চিকিৎসায় তাদের আস্থা নেই।’
Advertisement
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সমন্বয়ক নাসিম বলেন, ‘একজন আইনবিদ হিসেবে ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব জানেন, তিনি নিজেও আমার সঙ্গে জেলে ছিলেন। যখন একজন কারাবন্দী জেলে থাকেন অবশ্যই তাকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা নিতে হয়। আমরাও নিয়েছি উনিও নিয়েছেন। সরকারি চিকিৎসায় তাদের আস্থা নেই- এই কথাটি বলা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
খালেদা জিয়া আগে থেকেই কয়েকটি রোগে ভুগছিলেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তার (বেগম জিয়া) অনুরোধে ও কারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়। সেই বোর্ডের মেম্বাররা অনেকে এখানে উপস্থিত আছেন। তারা যে সুপারিশ করেছিলেন এই সুপারিশের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৭ এপ্রিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক্সরেসহ কতগুলো পরীক্ষা করা হয়।’
‘আমি বেগম জিয়াকে ধন্যবাদ জানাই তিনি অত্যন্ত সহযোগিতা করেছেন। তিনি মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। চিকিৎসকদের সহযোগিতা করেছেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী বাইরের চিকিৎসকরা ওখানে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হল একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। উন্নত চিকিৎসার গবেষণা করা হয় সেখানে’ বলেন নাসিম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে, থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। কীভাবে কেউ আশা করে আমরা বেগম জিয়ার চিকিৎসা করছি না, তাকে অসুস্থ বানানোর জন্য আমরা ব্যবস্থা করছি। এই কথাগুলো দায়িত্বহীনভাবে কেন বলে তারা?’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে দেখা গেছে- এটা জেল কোড নিয়মানুযায়ী ঠিক হয়েছে কি-না জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী তার ডাক্তাররা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটা প্রিভিলেজ হিসেবে তাকে দেয়া হয়েছে।’
বেগম জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগে টেলিফোনে স্বরাষ্ট্রন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, তিনি (বেগম জিয়া) ভালো আছেন এবং তার চিকিৎসা চলছে। তিনি নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন।’
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের মেডিকেল বোর্ডের স্যারদের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই মোতাবেক ওষুধ খাচ্ছেন। তিনি ৭৩ ঊর্ধ্বে বয়স্ক মহিলা, এই বয়সে অনেকের সমস্যা থাকেই। তিনি আগে থেকেই অস্টিও আর্থাইটিস রোগে আক্রান্ত। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন ও ভালো আছেন।’
খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আপনাদের সামনেই সম্মানিত চিকিৎসকরা কথাগুলো বললেন। তার সমস্যাগুলো বললেন। এরপর তো আর সন্দেহ থাকতে পারে না। তারা যেটা বলছেন সেটা শুধু রাজনৈতিক কারণে বলছেন। একটা বিশেষ হাসপাতালে কেন যাবেন তিনি? এখানে চিকিৎসা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ একটি বড় প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রতিষ্ঠান। একটা হাসপাতালের ব্যাপারে এত আকর্ষণ কেন তা আমরা বুঝতে পারলাম না।’
এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/আরএস/আরআইপি