প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের শর্তে সোনালী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ২০১৩ সালের আগস্টে জামিন পান হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম। সে হিসেবে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত জামিনের পর তিনি সময় পেয়েছেন ৫৫ মাস। ১০০ কোটি টাকা প্রতি মাসে পরিশোধ করলেও হিসাব মতে আদায় হতো পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু সোনালী ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০১২ সালের পর অর্থাৎ গত ছয় বছরে আদায় হয়েছে মাত্র ৫৬৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
Advertisement
হলমার্কের অর্থ উদ্ধারের উগ্রগতির নিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে সোনালী ব্যাংক। প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিকে বিভিন্ন সময় ঋণ দেয়া হয় তিন হাজার ৯৮৮ কেটি টাকা। এর মধ্যে কিছু অর্থ ফেরত আসলেও তিন হাজার ৪৪৮ কোটি ২০ লাখ টাকা আটকে যায়। আটকে যাওয়া এ অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে সোনালী ব্যাংক। এসব ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালত ও সাধারণ আদালতে মামলা হয়েছে। এসব পদ্ধতি অবলম্বন করে এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৫৬৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। তবে আর্থিক খাত বিশেজ্ঞরা বলছেন, এসব টাকা হলমার্ক গ্রুপের কোম্পানি থেকে আদায় করা হয়েছে। এখন বাকি টাকা গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে আদায় করতে হবে।
Advertisement
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে হলমার্কের ঋণ জালিয়াতির খবর প্রথম প্রকাশিত হয়। আলোচিত এ কেলেঙ্কারির হোতা হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ হলেও এর সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
মামলায় হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের আগস্টে প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে জেসমিন ইসলামকে জামিন দেন আদালত।
এরপর তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ১১ মামলায় চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার ভায়রা তুষার আহমেদসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়।
পরে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাগুলো বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ বদলি করা হয়। আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ আটজন। প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে জামিনে ছিলেন গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম। যদিও পরবর্তীতে অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য ১৬ জন পলাতক রয়েছেন।
Advertisement
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সম্ভবত সে টাকাগুলো এখন আর হলমার্ক গ্রুপের হাতে নেই। টাকাগুলো বের হয়ে গেছে। সেজন্যই তারা পরিশোধ করতে পারেনি। তবে হলমর্ক গ্রুপের বেশ সম্পদ রয়েছে সেগুলো বিক্রি করে অর্থ উদ্ধার করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, হলমার্কের মালিক তানভির মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামের নামে ২৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- হলমার্ক ফ্যাশন, ববি ফ্যাশন, ওয়ালমার্ট ফ্যাশন, হলমার্ক ডিজাইন ওয়ার্স, হলমার্ক স্টাইল, ববি ডেনিম কম্পোজিট, হলমার্ক নিটিং অ্যান্ড ডাইং, ইসলাম ফ্যাশন, মাহমুদ অ্যাপারেলস, ফারহান ফ্যাশন, মার্ভেলাস ফ্যাশন, ডেলিকেট ফ্যাশন, ডন অ্যাপারেলস, ওয়াল-মার্ট অ্যাপারেলস, এএন ডিজাইন, হলমার্ক ডেনিম ফ্যাশন, হলমার্ক ডেনিম কম্পোজিট, হলমার্ক প্যাকেজিং, হলমার্ক নিট কম্পোজিট, হলমার্ক স্পিনিং ও ববি ফ্ল্যাট বেড প্রিন্টিং। এসব প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ৯৩/২ পশ্চিম কাফরুল।
স্টার স্পিনিং মিলসের মালিক হিসেবে জনৈক আবুল বাসির, আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের মালিক জাহাঙ্গীর আলম, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মো. জাকারিয়া ও অ্যাপারেলস এন্টারপ্রাইজের মালিক হিসেবে সহিদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানগুলো তানভির মাহমুদেরই বেনামি প্রতিষ্ঠান।
এমইউএইচ/এএইচ/পিআর