দেশজুড়ে

মায়ের চিকিৎসা করানো হলো না হিমেলের

শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টার দিকে রিয়াদের আল-নূর ইউনিভাসির্টির আবাসিক এলাকায় শ্রমিকদের আবাসিক একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ছয় বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় অন্তত আরও পাঁচ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। নিহত ছয় বাংলাদেশির মধ্যে একজন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের উত্তরসোম (মিরাপাড়া) গ্রামের মো. মোজাম্মেল হক ভূইয়ার ছেলে মো. হিমেল ভূইয়া (২৪)।

Advertisement

সিমুচি হাসপাতালে গিয়ে হিমেলের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই দেশে অবস্থানকারী তার চাচা মো. কামাল হোসেন ভূইয়া।

মুঠোফোনে মো. কামাল হোসেন ভূইয়া জানান, তিনি সৌদির মক্কা এলাকায় কাজ করেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে যান। পরে ওই হাসপাতাল ও সৌদি পুলিশের সহযোগিতায় ছয় বাংলাদেশির মরদেহ দেখেন এবং সেখান থেকে হিমেলের মরদেহ শনাক্ত করেন। শনিবার রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানতে পারেন হিমেলের মরদেহ বাংলাদেশে পাঠাতে প্রায় এক থেকে দেড় মাস সময় লাগতে পারে।

এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাইয়ের ছেলের মরদেহটি যেন দ্রুত দেশে পাঠানো যায়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই। আর এ আবেদন শুধু হিমেলের চাচা কামালের নয়। দেশে তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সকলের।

Advertisement

রোববার সকালে হিমেলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে। বাবা মোজাম্মেল হক আর মা খালেদা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। দুই ছোট ভাই মাহিন ভূইয়া (৯) ও লামিম ভূইয়া (৬) কিছু না বুঝলেও ভাই হারানোর শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে। হিমেলের স্বজন-প্রতিবেশী সবাই কাঁদছেন।

মা খালেদা আক্তার জানান, তার মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙা। বাবার একার রোজগারে চিকিৎসা করাতে হিমসিম খাচ্ছিল। তাই মায়ের চিকিৎসার খরচ যোগাতেই বিদেশে পাড়ি দেয় হিমেল। গত ১২ এপ্রিল শেষবার হিমেলের সঙ্গে বাড়ির সবার কথা হয়। সেখানে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছিল বলেও ফোনে হিমেল তাদের জানায়।

নিহত হিমেলের বাবা মোজাম্মেল হক ভূইয়া জানান, তিনি উপজেলা সাব-রেজেস্ট্রি অফিসে দলিল লেখকের কাজ করেন। তিন ছেলের মধ্যে হিমেল ছিল সবার বড়। লেখাপড়া বেশি দূর করেনি। তবে সংসারে তার সহযোগিতার জন্য সবসময় হিমেল কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করত। তাই বিদেশ যাওয়ার বায়না করত। পরিবারের কেউ বিদেশ পাঠাতে সম্মত ছিল না। কিন্তু এক সময় ছেলের বায়নার কাছে পরিবারের সবাই হার মানে। চলতি বছরের শুরুর দিকে সৌদি আরবে পাড়ি জমায় হিমেল। সেখানে আল-নূর ইউনিভাসির্টিতে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে যোগদান করে।

এদিকে ঘটনা শোনার পরপরই শনিবার রাতে গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের নির্দেশে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান নিহত হিমেল ভূইয়ার বাড়িতে যান। ইউএনও শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

Advertisement

গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, এমন দুর্ঘটনা কখনই কাম্য নয়। আর হিমেলের পরিবারের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো সেটাও পূরণ হওয়ার নয়। তিনি হিমেলের বাবাকে মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

আব্দুর রহমান আরমান/এফএ/এমএস