দেশজুড়ে

ক্রাইম পেট্রোল দেখে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে সিয়াম

গাজীপুরের শ্রীপুরে আলোচিত মনোয়ারা পারভীন মুন্নী হত্যা মামলায় একমাত্র আসামি মোশারফ হোসেন সিয়ামকে গ্রেফতার করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) দিনগত রাতে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের তার দু’সম্পর্কের মামার বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ শনিবার ঘাতক সিয়ামকে আদালতে হাজির করলেও আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়।

Advertisement

গ্রেফতারকৃত সিয়ামের বরাত দিয়ে শ্রীপুর থানা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান জানান, পরিবারের অমতে তারা দুজনই ভালবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর মেয়ে পক্ষ তাদের বিয়ে মেনে নেয়। পরে সিয়াম শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সঙ্গে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

বিয়ের পর থেকেই সিয়ামের স্ত্রী মনোয়ারা পারভীন মুন্নী বিভিন্ন জনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে শারীরিক সম্পর্ক করলে স্বামী সিয়াম তাকে বাধা দেয়। এ নিয়ে একাধিকবার তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হলে মুন্নী সিয়ামকে মারধর করেন বলে জানায়। এরই জেরে মুন্নীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সিয়াম। পরে সিয়াম ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘সনি আট’ এ ক্রাইম পেট্রোলের বিভিন্ন পর্ব দেখে হত্যার পূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

৬ এপ্রিল শুক্রবার ঘটনার দু’দিন আগে মঙ্গলবার ও বুধবার দিনগত রাতে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থও হয় সে। পরে বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে হত্যার সিদ্ধান্ত নিলেও ঘুম থেকে জাগতে না পারায় সে পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়। পরে শুক্রবার সকাল ৭টায় ঘুম ভাঙ্গলে ভালবাসার পরশে ভুলিয়ে দৈহিক মিলন করেন তারা। এদিকে মুন্নী মা, বাবা ও ভাই বাড়িতে না থাকায় সুযোগে সকাল ৯টার দিকে সিয়াম তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।

Advertisement

প্রথমে তাকে ছুরি (এন্টিকাটার) দিয়ে গলার কাটার চেষ্টা করলেও তা গিয়ে কাঁধে লাগে। পরে মুন্নীর পেট কাটার উদ্দেশ্যে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। এ সময় মুন্নী-সিয়ামের মধ্যে ধস্তাধস্তি হলেও একহাতে গলা চেপে ধরে অপর হাতে থাকা ছুরি মুন্নীর গলায় চালায় সে। এর কিছুক্ষণ পরই মৃত্যু কোলে ঢলে পড়েন মনোয়ারা পারভীন মুন্নী। হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর সিয়াম ঘরের জানালার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যায়।

দু’জনের মধ্যে প্রায় দশ মিনিট ধরে চলা এই হত্যাকাণ্ডের শব্দ ও মনোয়ারার বাঁচার জন্য চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। প্রতিদিনের মতোই তাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে ভেবে আশপাশের কেউ এগিয়ে যায়নি। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার সময় এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করছিলেন সিয়াম।

হত্যার পর গোসল খানায় গিয়ে তার রক্ত মাখা পোশাক পরিবর্তন করে শ্বশুড়ের পোশাক পড়ে জানালার গ্রিল ভেঙে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে সেখান থেকে প্রথমে ময়মনসিংহ, বান্দরবান, কক্সবাজার, বগুড়ার পর দিনাজপুর যাওয়ার পর পরই পুলিশের হাতে আটকে যায় সিয়াম।

উপ-পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান আরো জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে বগুড়া, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিয়াম পুলিশের কাছে স্ত্রী মনোয়ারাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ ঘাতক মোশারফ হোসেনকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৯টায় গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার প্রশিকা মোড় এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে মনোয়ারা পারভীন মুন্নীকে স্বামী গলা কেটে হত্যা করে।

শিহাব খান/এমবিআর/