আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিতি লাভ করতে পার। (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)। আয়াতে উল্লেখিত বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর ভাষা, বর্ণ ও সংস্কৃতি আলাদা বলা হয়েছে।
Advertisement
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষার ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষ এর ব্যতিক্রম নয়। আর মহান আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে আরবি, বাংলা, ফারসি ও ইংরেজিসহ মানুষের মনের ভাব প্রকাশে অসংখ্য ভাষা দান করেছেন। এ সবই আল্লাহ তাআলার নেয়ামত।
প্রতিটি ভাষার মানুষেরই নির্ধারিত নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। আর সে সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো ভাষার প্রতি আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। তবে সংস্কৃতির নামে ভিন্ন সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ আবার গ্রহণযোগ্য ও পালনীয় নয় বরং তা পরিত্যাগ করাই ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণকারীর নৈতিক দাবি।
বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকাংশই মুসলমান। আর ইসলাম ও মুসলমান সংস্কৃতির ব্যাপারে ব্যাপকভাবে সতর্ক। সভ্যতা ও সংস্কৃতির নামে অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড ইসলাম সমর্থন করে না। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর কোনো ধর্মেই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্থান নেই।
Advertisement
বাংলা নববর্ষ বৈশাখ মাসের আগমনের মাধ্যমে শুরু হয়। বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখ। তাই বৈশাখ মাস আসলেই বাংলা ভাষা-ভাষী সব ধর্ম বর্ণের মানুষকে এক মঞ্চে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে তোলে। সবাই সাম্য, সম্প্রীতি ও উদারতার মহান শিক্ষা লাভ করে।
সব জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের জন্যই তাদের নতুন বছর মহান আল্লাহর দান। তাই প্রত্যেক ভাষার মানুষ যদি সে ভাষার আগামী জীবনের কল্যাণ কামনায় নবপরিকল্পনা গ্রহণ করে উন্নত জীবন লাভ করতে চায়; মানুষের এ চাওয়া দোষণীয় নয় বরং তাদের এ চাওয়া বা প্রার্থনা হতে পারে আল্লাহ তাআলার অপার রহমত স্বরূপ।
তবে ধর্মের দোহাই দিয়ে বা অন্য কোনো আজুহাতে কোনো দেশ, সম্প্রদায় বা জাতির সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি সংস্কৃতির নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমর্থনও দোষণীয় অপরাধ।
উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে-হিজরি নববর্ষ শুরু হয়েছে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের সময়কাল থেকে শুরু করে। যদি কেউ এ হিজরি নববর্ষ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়, সে জন্য তো হিজরি বর্ষ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান দায়ী হতে পারে না।
Advertisement
আবার মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা লম্বা আলখেল্লা ও রুমাল ব্যবহার করে, পশ্চিমা বিশ্বের লোকেরা পড়ে শর্ট পোশাক। আবার বাঙালি-বাংলাদেশীরা লুঙ্গি-ধূতি-পাঞ্জাবি পরতে ভালোবাসেন। তাই বলে কারো সংস্কৃতিকে কটাক্ষ করা ঠিক নয়। তবে সংস্কৃতি যেন মানুষকে অশালীন পোশাকের পরিবর্তে শালীন পোশাক পড়তে উদ্বুদ্ধ করে।
ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী কোনো বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের জন্য ভিনদেশী ও অন্য ধর্মের লোকদের পালনীয় কোনো কাজে অংশগ্রহণ ও পালন করা সমীচীন নয়; বরং তা অন্যায় ও নিষেধ। সংস্কৃতির নামে ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের জন্য তাতে অংশগ্রহণ মারাত্মক অপরাধ।
একটু পিছনে ফিরে তাকালেই পহেলা বৈশাখের বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায়-দুনিয়ার জীবনের কাজ-কর্মের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল পারস্পরিক লেনদেন। লেনদেন-এ স্বচ্ছতা আনতে যুগ যুগ ধরে এ দেশের ক্রেতা সাধারণ ও দোকানিরা পহেলা বৈশাখেই তাদের বিগত বছরের লেনদেন, হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নেন। হালখাতা তৈরি করেন। হালাল ও স্বচ্চ জীবিকার জন্য নতুন করে ভাবেন। এটা প্রতিটি মানুষের জন্য কল্যাণের বারতাই বহন করে।
সুতরাং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের উচিত, অনৈতিক ও বিজাতীয় কর্মকাণ্ডমুক্ত হয়ে ব্যবসায়িক কাজে বৈশাখ ও হালখাতা উদযাপনে এগিয়ে আসা।
আর ধর্মবর্ণ নির্বিষেশে প্রতিটি মানুষেরই উচিত, স্বচ্চ সুন্দর ও নৈতিক জীবন লাভে অন্যায়, অসত্য ও অসুন্দরকে দুপায়ে দলে শান্তির পথে ও মতে আগামি জীবনের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা। পহেলা বৈশাখ হোক নতুন বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কল্যাণের পথে জীবন পরিচালনার পথচলা...
এমএমএস/আরআইপি